১০০ কবিরা গুনাহ – ৩য় পর্ব

১০০ কবিরা গুনাহ ১ম পর্ব
১০০ কবিরা গুনাহ ২য় পর্ব

Table of Contents

৬১. চেহারায় দাগ লাগানো (বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করা):

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَيْهِ حِمَارٌ وَقَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الَّذِي وَسَمَهُ»
“একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি গাধা অতিক্রম করছিল। তিনি দেখলেন, তার মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া রয়েছে। তখন তিনি বললেন, “সে ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) যে তার মুখমণ্ডলে দাগ দিয়েছে।” [মুসলিম]

৬২. জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لعنَ اللَّهُ من غيَّرَ مَنارَ الأرضِ
“যে ব্যক্তি জমিনের সীমানা পরিবর্তন করবে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।” [মুসলিম]

এখানে সীমানা পরিবর্তন অর্থ হচ্ছে, জমির আইল চেপে সীমানা নষ্ট করা। বা কারো জমি আত্মসাৎ করে নিজের জমির অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া। এদের শাস্তি সম্পর্কে রসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“যে ব্যক্তি কারো অর্ধ হাত জমি জবরদখল করবে, কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক জমিন ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।” [বুখারি]

৬৩. গিবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা:

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا
“পরস্পরের দোষ চর্চা করা তোমাদের জন্য উচিত নয়। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভায়ের মাংস খেতে পছন্দ করে?”
[সূরা হুজুরাত: ১২]

৬৪. মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশগ্রহণ করা:

আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لعن اللهُ الخمرَ وشاربَها وساقِيَها وبائعَها ومبتاعَها وعاصرَها ومعتَصِرَها وحاملَها والمحمولةَ إليه
“মদ প্রসঙ্গে আল্লাহর রসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন, যে নিজে (ফল-ফলাদি থেকে মদ তৈরির উদ্দেশ্যে) রস নিংড়ায় অথবা অন্যের নিকট নিংড়িয়ে নেয়, মদ্যপায়ী, মদ বহনকারী, যার কাছে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, বিক্রয় মূল্য ভক্ষণকারী, ক্রেতা এবং যার জন্যে ক্রয় করা হয়।”
[তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ]

৬৫. শরীরে ট্যাটু (উল্কি) অংকন করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لعن الله الواشمات والمستوشمات .. المغيرات خلق الله تعالى
“আল্লাহ লানত (অভিসম্পাত) করেছেন যে সব নারী (অথবা পুরুষ) শরীরে ট্যাটু (উল্কি) অংকন করে এবং যার করে দেওয়া হয় তাদের উভয়কে। এরা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তনকারী।” [বুখারি]

৬৬-৬৭. লোহা বা লোহা জাতীয় কোন যন্ত্র পুড়িয়ে দাঁত চিকন করা ও সৌন্দর্য বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে মুখমণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা ভ্রু চিকন করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لعن الله النامِصاتِ ، و الْمُتَنَمِّصاتِ ، والْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ ، الْمُغَيِّراتِ خلْقَ اللهِ
“আল্লাহ তাআলা লানত (অভিসম্পাত) করেছেন ঐ সকল নারীকে যারা (সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে) মুখমণ্ডলের চুল তুলে ফেলে (অথবা ভ্রু চিকন কর) এবং দাঁত চিকন করে; যারা এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়।” [বুখারি]

উল্লেখ্য যে, কোনও নারীর মুখে যদি মোচ-দাড়ি গজায় বা ঠোঁটের তলদেশে পশম গজায় তাহলে তা তুলে ফেলা দোষণীয় নয়। কারণ এগুলো তার জন্য কষ্টদায়ক।-অনুবাদক।

৬৮. মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোগ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ ، وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ
“যে নারী মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোগ করে দেয় আর যে করে নেয় এবং যে মহিলা (অথবা পুরুষ) শরীরে ট্যাটু বা উল্কি অংক করে দেয় এবং করে নেয় (বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চামড়ার উপর খোদায় করত: সৌন্দর্য বর্ধক বিভিন্ন চি‎হ্ন অংকন করে) তাদের সকলের উপর আল্লাহর অভিশাপ।” [বুখারি]

৬৯. মহিলা বেশ ধারণ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لعَن رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم المُتشبِّهينَ من الرِّجالِ بالنِّساءِ والمُتشبِّهاتِ من النِّساء بالرِّجالِ
মহিলা বেশ ধারী পুরুষ এবং পুরুষ বেশ ধারিণী মহিলাকে আল্লাহর রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।” [বুখারি]

৭০. কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ اليَهُودَ والنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
“ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। এরা এদের নবিদের কবরগুলোকে সেজদার স্থান তথা উপাসনালয় হিসাবে গ্রহণ করেছে। [বুখারি]

৭১. পথিককে পানি না দেওয়া:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ثلاثةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ عزَّ وجلَّ يومَ القيامةِ، ولا ينظرُ إليهِم، ولا يزَكِّيهم، ولَهُم عذابٌ أليمٌ: رجلٌ على فَضلِ ماءٍ بالفلاةِ يمنعُهُ ابنَ السَّبيلِ
“কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়া দায়ক শাস্তি। এদের মধ্যে একজন হল, জন মানবহীন প্রান্তরে যার কাছে অতিরিক্ত পানি রয়েছে তথাপি (পিপাসার্ত) মুসাফির বা পথচারীকে তা দিল না।” [মুসলিম]

৭২-৭৩. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা এবং টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ثَلاثَةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ ولا يَنْظُرُ إليهِم ولا يُزَكِّيهِمْ ولَهُمْ عَذابٌ ألِيمٌ المَنَّانُ الذي لا يُعْطِي شيئًا إلَّا مَنَّهُ، والْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بالحَلِفِ الفاجِرِ، والْمُسْبِلُ إزارَهُ
“কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের দিকে আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না, তাদেরকে (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। যে ব্যক্তি কারো উপকার করে পরে সুযোগ বুঝে খোঁটা দেয়, মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য-সামগ্রী বিক্রয় করে এবং টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে লুঙ্গি (বা পোশাক) পরিধান করে।” [মুসলিম]

৭৪. মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বয়াত (আনুগত্যের শপথ) ভঙ্গ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ثَلاثٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَومَ القِيامَةِ، ولا يَنْظُرُ إليهِم، ولا يُزَكِّيهِمْ ولَهُمْ عَذابٌ ألِيمٌ: ورَجُلٌ بايَعَ إمامًا لا يُبايِعُهُ إلَّا لِدُنْيا فإنْ أعْطاهُ مِنْها وفَى، وإنْ لَمْ يُعْطِهِمِنْها لَمْ يَفِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির মানুষের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে পীড়া দায়ক শাস্তি। তাদের মধ্যে একজন হল, যে ব্যক্তি ইমাম (তথা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান)-এর নিকট বায়াত (তথা আনুগত্যের শপথ) নিলো কেবল পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। স্বার্থ সিদ্ধি হলে শপথ বাস্তবায়ন করল আর তা না হলে তা ভঙ্গ করল।” [মুসলিম]

৭৫. রমজান মাসের রোজা ছেড়ে দেওয়া:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ رُخْصَةٍ وَلاَ مَرَضٍ لَمْ يَقْضِ عَنْهُ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ وَإِنْ صَامَهُ
“যে ব্যক্তি রোখসত (শরিয়ত অনুমোদিত কারণ) বা রোগ ব্যতিরেকে রমজানের রোজা ভঙ্গ করবে সারা জীবন সিয়াম পালন করলেও তার কাজা আদায় হবে না।” [আহমদ, তিরমিযি, আবু দাউদ]
(উক্ত হাদিসটিকে মুহাদ্দিসগণ জইফ বলেছেন। [দ্রষ্টব্য: যইফুত তিরমিযি, হা/৭২৩]-অনুবাদক)

৭৬. ডাকাতি করা:

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَن حَملَ علَينا السِّلاحَ فلَيسَ منَّا
“যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঠলো সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [বুখারি ও মুসলিম]

৭৭. ইসলামের কোন রোকন পরিত্যাগ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
بُنِيَ الإسلامُ على خمسٍ شَهادةِ أن لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وأنَّ محمَّدًا رسولُ اللَّهِ وإقامِ الصَّلاةِ وإيتاءِ الزَّكاةِ وصَومِ رمضانَ وحجِّ البيتِ لمنِ استطاعَ إليهِ سبيلًا
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত প্রদান করা, রমজান মাসে রোজা পালন করা এবং আল্লাহর ঘরের হজ সম্পাদন করা।” [বুখারি ও মুসলিম]

৭৮. গনিমত তথা যুদ্ধলদ্ধ সম্পদ বণ্টনের পূর্বে আত্মসাৎ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নবি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক গনিমত (যুদ্ধলদ্ধ সম্পদ) আত্মসাৎকারী মুসলিম যোদ্ধা সম্পর্কে বলেন,
إنِّي رَأَيْتُهُ في النَّارِ في بُرْدَةٍ غَلَّها، أوْ عَباءَةٍ
“আমি তাকে একটি চাদর বা আলখাল্লা আত্মসাতের কারণে জাহান্নামের আগুনে প্রজ্বলিত হতে দেখেছি।” [বুখারি ও মুসলিম]

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَامَ فِينَا رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ ذَاتَ يَومٍ، فَذَكَرَ الغُلُولَ، فَعَظَّمَهُ وَعَظَّمَ أَمْرَهُ

“রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা কালে গনিমতের সম্পদ আত্মসাতের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন এবং এর ভয়াবহতা ও করুণ পরিণতির কথা খুব কঠিন ভাষায় উপস্থাপন করেন।” [সহিহ মুসলিম]

৭৯. স্ত্রীর পায়ুপথে যৌন ক্রিয়া করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ملعونٌ من أتى امرأتَهُ في دبرِها
“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পায়ুপথে যৌন ক্রিয়া সম্পাদন করে সে অভিশপ্ত।”
[আহমদ, সহিহ আবু দাউদ, হা/২১৬২-হাসান]

৮০. অত্যাচার-নির্যাতন করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اتَّقُوا الظُّلمَ ؛ فإنَّ الظُّلمَ ظُلُماتٌ يومَ القيامةِ
“তোমরা জুলুম-নির্যাতন করার ব্যাপারে সতর্ক হও। কারণ জুলুম-নির্যাতন পরকালে অন্ধকার (হিসেবে উপস্থিত হবে)।”
[বুখারি ও মুসলিম]

৮১. অস্ত্রের মাধ্যমে ইঙ্গিত করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَن أشارَ إلى أخِيهِ بحَدِيدَةٍ، فإنَّ المَلائِكَةَ تَلْعَنُهُ، حتَّى يَدَعَهُ
“যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করল বা তাকে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখাল সে অস্ত্র ফেলে দেওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ দিতে থাকে।” [মুসলিম]

৮২. পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামের সীমানার মধ্যে ইসলাম দ্রোহিতা মূলক কাজ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللهِ ثَلاَثَةٌ مُلْحِدٌ فِي الْحَرَمِ
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি ক্রোধের পাত্র তিন শ্রেণির মানুষ: যে ব্যক্তি হারামের মধ্যে ইসলাম দ্রোহিতা মূলক কাজ করে।” [বুখারি]

৮৩. প্রতারণা বা ঠগ বাজি করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [মুসলিম]

৮৪. রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَن يُسَمِّعْ يُسَمِّعِ اللَّهُ به، ومَن يُرائِي يُرائِي اللَّهُ بهِ
“যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর উদ্দেশ্যে সৎকর্ম করবে (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গোপন উদ্দেশ্যের কথা) মানুষকে শুনিয়ে দিবেন এবং যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎকর্ম করবে মহান আল্লাহ (কেয়ামতের দিন মানুষের সামনে) গোপন উদ্দেশ্য ফাঁস করে দিবেন।” [বুখারি ও মুসলিম]

৮৫. গণকের কাছে যাওয়া:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَن أَتَى عَرَّافًا فسأله عن شيءٍ فصَدَّقَهُ بما قال لم تُقْبَلْ له صلاةٌ أَرْبَعِينَ يومًا
“যে ব্যক্তি ব্যক্তি গণকের নিকট গিয়ে কোন কিছু জানতে চাইলে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল হবে না।” [মুসলিম]

৮৬. স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‏ الَّذِي يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ
“যে ব্যক্তি রৌপ্যের তৈরি পাত্রে পান করবে তার পেটে জাহান্নামের আগুন গড়গড় করে ফুটবে।” [বুখারি ও মুসলিম]

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে:
إنَّ الَّذِي يَأكُلُ أَوْ يَشْرَبُ في آنِيَةِ الفِضَّةِ وَالذَّهَبِ
“যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করে।”

৮৭. পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا تشْرَبُوا في آنيةِ الذهبِ والفضةِ ، ولا تأكلُوا في صحافِها ، ولا تلبَسوا الحريرَ ولا الديباجَ ، فإِنَّه لهم في الدنيا ، وهو لكم في الآخرةِ
“স্বর্ণ, রৌপ্য, রেশম, (সিল্ক) বা রেশম মিশ্রিত পোশাক দুনিয়ায় ওদের জন্য (অর্থাৎ কাফেরদের জন্য) আর পরকালে তোমাদের জন্য।”

অন্য হাদিসে রয়েছে,
إنَّما هذِه لِبَاسُ مَن لا خَلَاقَ له
“রেশমি পোশাক সেই পরিধান করবে পরকালে যার প্রতিদান নেই।” [বুখারি]

৮৮. সাহাবিদের গালমন্দ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا تَسُبُّوا أصْحابِي
“তোমরা আমার সাহাবিদের গালমন্দ কর না।” [সহিহ মুসলিম]

তিনি আরও বলেন,
لا يُحِبُّ الأنصارَ إلا مؤمنٌ ، ولا يُبْغِضُهم إلا منافقٌ ، ومَن أَحَبَّهم أَحَبَّهُ اللهُ ، ومَن أَبْغَضَهم أَبْغَضَه اللهُ
“আনসারি সাহাবিদেরকে ভালবাসে কেবল মুমিন। আর গালি দেয় মুনাফিক বা কপট লোক। যে তাদেরকে ভালবাসে আল্লাহ তাকে ভালবাসে। আর যে তাদের ঘৃণা করে আল্লাহ তাকে ঘৃণা করেন।” [বুখারি ও মুসলিম]

৮৯. নামাজরত অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لو يعلَمُ المارُّ بين يديِ المُصلِّي ماذا عليه، لكان أنْ يقِفَ أربعين خيرًا له مِن أنْ يمُرَّ بين يديه،
قال: أبو النَّضرِ: لا أدري، أقال أربعين يومًا، أو شهرًا، أو سنةً
“নামাজ অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করলে কী পরিমাণ গুনাহ হবে তা কেউ জানলে মুসল্লির সামনে দিয়ে না গিয়ে চল্লিশ (৪০ দিন, ৪০ মাস কিংবা ৪০ বছর) দাঁড়িয়ে থাকাও তার জন্য কল্যাণকর হত।” [বুখারি ও মুসলিম]

৯০. মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَيُّما عَبْدٍ أَبَقَ مِن مَوَالِيهِ فقَدْ كَفَرَ حتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِمْ
“যে দাস তার মনিবের নিকট থেকে পলায়ন করে সে কুফরি করবে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” [মুসলিম]

৯১. ভ্রান্ত ও জাহেলি মতাদর্শ, রীতি-নীতি বা বিদআতের প্রতি আহবান করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَبْغَضُ النَّاسِ إلى اللَّهِ ثَلاثَةٌ: ومُبْتَغٍ في الإسْلامِ سُنَّةَ الجاهِلِيَّةِ
“আল্লাহর নিকট তিন শ্রেণির লোক ঘৃণার পাত্র: তন্মধ্যে একজন হল, যে ব্যক্তি ইসলামে জাহেলি রীতি-নীতির অনুসন্ধান করে।” [বুখারি]

তিনি আরও বলেন,
مَن دعا إلى ضلالةٍ كان عليه مِن الإثمِ مِثْلُ آثامِ مَن تبِعهُ لا ينقُصُ ذلك مِن آثامِهم شيئًا
“যে ব্যক্তি মানুষকে ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানাবে সে ঐ মতাদর্শের অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপের অধিকারী হবে। তা হতে বিন্দুমাত্র কম করা হবে না।” [সহিহ মুসলিম]

৯২. স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إنَّ مِن أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَومَ القِيَامَةِ، الرَّجُلَ يُفْضِي إلى امْرَأَتِهِ، وَتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক ঐ ব্যক্তি বিবেচিত হবে, যে একান্ত নিভৃতে তার স্ত্রী সাথে মিলিত হয় এবং তার স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয় এরপর তার গোপনীয়তা প্রকাশ করে দেয়।” [সহিহ মুসলিম]

৯৩-৯৪. পবিত্র মদিনায় কোন অপকর্ম বা দুষ্কৃতি করা অথবা কোন দুষ্কৃতিকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الْمَدِينَةُ حَرَمٌ، فمَن أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا، أَوْ آوَى مُحْدِثًا، فَعليه لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لا يُقْبَلُ منه يَومَ القِيَامَةِ عَدْلٌ، وَلَا صَرْفٌ
“মদিনা হল, হারাম (তথা পবিত্র বা নিষিদ্ধ) নগরী। যে ব্যক্তি এতে কোন দুষ্কৃতি করে বা কোন দুষ্কৃতিকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহ, ফেরেশতামণ্ডলী এবং সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে অভিশাপ। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরজ বা নফল ইবাদত কবুল করা হবে না।” [সহিহ বুখারি]

৯৫. কোন মুসলিম কোন অমুসলিমকে নিরাপত্তা দিলে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
وَذِمَّةُ المُسْلِمِينَ وَاحِدَةٌ، يَسْعَى بهَا أَدْنَاهُمْ، فمَن أَخْفَرَ مُسْلِمًا، فَعليه لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لا يُقْبَلُ منه يَومَ القِيَامَةِ عَدْلٌ، وَلَا صَرْفٌ
“মুসলিমদের আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি বলে বিবেচিত হবে-যা বাস্তবায়নে সর্বনিম্ন ব্যক্তিও চেষ্টা করবে। সুতরাং কেউ কোন মুসলিমের সাথে এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতা করলে (অর্থাৎ কোনও মুসলিম যদি কোনও অমুসলিমকে নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া আর তা যদি অন্য কোনও মুসলিম ভঙ্গ করে তাহলে) তার প্রতি আল্লাহ, ফেরেশতা মণ্ডলী এবং সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে অভিসম্পাত। কিয়ামতের দিন তার ফরজ ও নফল কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না।” [বুখারি ও মুসলিম]

৯৬. আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أنَّ رَجُلًا قالَ: واللَّهِ لا يَغْفِرُ اللَّهُ لِفُلانٍ، وإنَّ اللَّهَ تَعالَى قالَ: مَن ذا الذي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أنْ لا أغْفِرَ لِفُلانٍ، فإنِّي قدْ غَفَرْتُ لِفُلانٍ، وأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ، أوْ كما قالَ
“জনৈক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করল, যে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেনা। তার এ মন্তব্য শুনে আল্লাহ তাআলা বললেন, “এমন কে আছে যে অনাধিকারভাবে আল্লাহর উপর বাড়িয়ে কথা বলে যে, তিনি উমুককে ক্ষমা করবেন না। আমি ঐ লোক কে ক্ষমা করে দিলাম আর তোমার সমস্ত আমল বাতিল করে দিলাম।” [সহিহ মুসলিম]

৯৭. জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَيَنْتَهينَّ أقْوامٌ عن ودْعِهِمُ الجُمُعاتِ، أوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ علَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكونُنَّ مِنَ الغافِلِينَ
“কতিপয় লোক জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা হতে বিরত না থাকলে আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণে মোহর মেরে দিবেন। ফলে তারা উদাসীন লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (ফলে আর কোন ভাল কথাই তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না।) [সহিহ মুসলিম]

৯৮. যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إلى فِرَاشِهِ فأبَتْ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا المَلَائِكَةُ حتَّى تُصْبِحَ
“কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে শয্যায় আহবান করলে স্ত্রী যদি তাতে অসম্মতি জানায় এবং তাতে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীর উপর অভিশাপ জানাতে থাকে।” [বুখারি ও মুসলিম]

৯৯-১০০. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা এবং বেশি বেশি অভিশাপ দেওয়া:

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের লক্ষ্য করে বলেছেন,
يا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ؛ فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ. فَقُلْنَ: وَبِمَ يا رَسُولَ اللَّهِ قال: تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ
“হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা দান-সদকা করো। কারণ, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমাদের সংখ্যাই বেশি দেখেছি। মহিলারা জিজ্ঞেস করলেন, তা কি কারণে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, কারণ, তোমারা বেশি বেশি অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অবদান অস্বীকার করে থাক।” [বুখারি]
সমাপ্ত

Exit mobile version