হতাশ হবেন না

হতাশ হবেন না, আল্লাহ সব জানেন।

আপনি কতোটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন সেটা অন্য কেউ না জানলেও আল্লাহ জানেন। আপনার মনের কথাগুলো আর কেউ জানুক কিংবা না জানুক আল্লাহ ঠিকই জানেন।
আপনার মনের মধ্যে থাকা হতাশা দূর করতে এই পোস্টটি ইনশাআল্লাহ আপনার কাজে আসবে।

হতাশ এবং কষ্ট

যখন আপনি কষ্টের মধ্যে থাকেন তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ বলেন,

إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
সূরা আল ইনশিরাহ
(মক্কায় অবতীর্ণ – আয়াত ৬)


যখন জীবনে না পাওয়ার বেদনা আপনাকে ঘিরে ধরে তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
সূরা আদ্ব-দ্বোহা
(আয়াত- ৫)

যখন কোনো কাজকে আপনার কাছে কঠিন, অসম্ভব বলে মনে হয় তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।
সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব
(আয়াত-০৪নং)

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।”

যখন বিপদে আপনি দিশেহারা হয়ে পড়েন তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء وَزُلْزِلُواْ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللّهِ أَلا إِنَّ نَصْرَ اللّهِ قَرِيبٌ
তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনি ভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী।
সূরা আল বাক্বারাহ 
আয়াত নং-২১৪

“আল্লাহর সাহায্য নিকটে (সুরা বাকারা:২১৪)।”

যখন আপনি কষ্টের মধ্যে দিয়ে আপনার জীবন অতিবাহিত করেন আর চিন্তা করেন কবে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
“আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন (সুরা তালাক:৭)।”

لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।
সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব
(আয়াত-০৭)

আপনি আল্লাহর কাছে কিছু চেয়েছিলেন কিন্তু পান নি তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
“আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে ভালো কিছু দেখেন তাহলে তোমাদের কাছ থেকে যা নেওয়া হয়েছে তা থেকে উত্তম কিছু তোমাদের তিনি দান করবেন আর তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন।আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সুরা আনফাল:৭০)।”

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّمَن فِي أَيْدِيكُم مِّنَ الأَسْرَى إِن يَعْلَمِ اللّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّا أُخِذَ مِنكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
সূরা আল-আনফাল (আয়াত-৭০)

যখন আপনার পরিকল্পনাগুলো সফল হয় না তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী (সুরা ইমরান:৫৪)।”

وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী।
সূরা আল ইমরান (আয়াত-৫৪)

যখন আপনি কাউকে ভরসা করতে পারেন না তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট (সুরা তালাক:৩)।”

وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (আয়াত-০৩)

যখন আপনি বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণে হতাশা আপনাকে ঘিরে ধরে তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ বলেন,
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না।তুমিই জয়লাভ করবে যদি তুমি বিশ্বাসী হও (সুরা আল ইমরান:১৩৯)।”

وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
সূরা আল ইমরান (আয়াত-১৩৯)

যখন আপনার কাছে দুনিয়ার কষ্টগুলো বেশি বলে মনে হয় তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছো। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী (সুরা আ’লা:১৬-১৭)।”

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى
অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
সূরা আল আ’লা (আয়াত-১৬-১৭)

যখন আপনি বিষণ্ণ হয়ে পড়েন তখন কুরআনের এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন।আল্লাহ বলেন,
“জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায় (সুরা রাদ:২৮)।”

হতাশ হবেন না - Islami Lecture
হতাশ হবেন না – Islami Lecture

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।
সূরা রা’দ (আয়াত-২৮)

দুনিয়ার এই জীবনে বিপদ-আপদ আসেই। নানান সময় নানান দিক থেকে বিপদ-আপদ এসে হামলে পড়ে আমাদের উপর। অর্থসম্পদ সন্তানাদি সংসারে সম্মান-মর্যাদা- আক্রান্ত হয় সবকিছুইর উপর। তাই হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও।

আমাদের উচিত সাময়িক ব্যর্থতা এবং বাধা-বিপত্তি ও না পাওয়ার বেদনায় হতাশ না হয়ে, ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করা। আল্লাহ আমাদের হতাশামুক্ত জীবন দান করুন।

– – – আমীন

Exit mobile version