Writing

স্বামীর মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে বিধবা স্ত্রীর বিয়ে!

মনে করুন, একজন মেয়ের স্বামী মারা গেলেন ২০২০ সালে। সেই মেয়ে ২০২১ সালে অর্থাৎ, স্বামীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে আবার বিয়ে করেন। নতুনভাবে সংসার শুরু করেন। চিন্তা করুন, সমাজের লোকজন সেই মেয়েকে নিয়ে কী মন্তব্য করতে পারে?

তারা বলবে, স্বামী মারা যাবার একবছরও হয়নি, এরইমধ্যে মেয়েটি আবার বিয়ে করলো?
স্বামীর জন্য কি তার ভালোবাসা ছিলো না?
আরো কয়েকটি বছর অপেক্ষা করলে কী এমন হতো?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন সাহাবী ছিলেন সা’দ বিন খাওলা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর স্ত্রীর নাম সুবাইআহ বিনতে হারিস আসলামিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা। স্বামী-স্ত্রী দুজনই ইসলাম প্রচারের শুরুতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা প্রথমে আবিসিনিয়ায়, পরবর্তীতে মদীনায় হিজরত করেন।

সা’দ বিন খাওলা রাদিয়াল্লাহু আনহু বদর, ওহুদ, খন্দক, হুদাইবিয়া সহ সকল বড়ো বড়ো যুদ্ধ-সন্ধিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলেন। বিদায় হজ্জের সময় তিনি মক্কায় যান। তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মক্কায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যথিত হোন। রাসূলুল্লাহ চাইতেন তাঁর মুহাজির সাহাবীরা যেনো মদীনায় গিয়ে ইন্তেকাল করে।

সা’দ ইবনে খাওলা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন ইন্তেকাল করেন, তাঁর স্ত্রী সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন সন্তানসম্ভবা। স্বামীর ইন্তেকালের এক মাসের মধ্যে তিনি সন্তান প্রসব করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় ২৩ দিন, ২৫ দিন, কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় ৪০ দিন।
[সহীহ বুখারী: ৪৯০৯, সুনানে আন-নাসাঈ: ৩৫০৮]
তাঁর সন্তান কিছুদিন পর মারা যায়।

নিফাস থেকে পবিত্র হবার পর সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহা সাজসজ্জা শুরু করেন। তিনি পুনরায় বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া আরম্ভ করেন। ততোদিনে তাঁর স্বামীর ইন্তেকালের দুই-আড়াইমাস হবে।

সাধারণত, স্বামীর ইন্তেকালের পর মহিলাদের ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়।

কিন্তু, সুবাইআহ বিনতে হারিস আসলামিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বামীর ইন্তেকালের প্রায় তিন মাসের মধ্যে পুনরায় বিয়ের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলে লোকজন বলাবলি শুরু করলো- ‘ইদ্দত পূরণ হবার আগেই?’

তাঁকে যারা বিয়ের প্রস্তাব দেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবুস সানাবিল ইবনু বা’কাক রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন,
“তুমি বিয়ের আশায় পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা শুরু করে দিয়েছো?
আল্লাহর কসম! চার মাস দশদিন অতিবাহিত না হবার পূর্বে তুমি বিয়ে করতে পারবে না।”

সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহা একথা শুনার পর বিকেলে পরিপাটি হয়ে গেলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে। তাঁকে গিয়ে তাঁর অবস্থার কথা জানান। তাঁর পুনরায় বিয়ের জন্য ৪ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জানেলেন-

“যখন তুমি সন্তান প্রসব করেছো, তখনই তুমি (বিয়ের জন্য) হালাল হয়ে গেছো। তুমি চাইলে বিয়ে করতে পারো।”
[সহীহ বুখারী: ৩৯৯১, সুনানে আন-নাসাঈ: ৩৫১৬]

ফলে, সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বামীর মৃত্যুর ৪ মাসের মধ্যে পুনরায় বিয়ে করেন

ইসলামের স্বর্ণযুগে একজন বিধবা নারী সাধারণত অবিবাহিত অবস্থায় বেশিদিন থাকতেন না। তাঁদের পুনরায় বিয়ে হতো। ফলে দেখা যায়, বেশিরভাগ নারী সাহাবীর দুই, তিন, চারটি বিয়ে হয়। তাঁদের স্বামী ইন্তেকাল করলে তারা ইদ্দত পূরণ করার পর পুনরায় বিয়ে করতেন। স্বামীর ইন্তেকালের পর চার মাসের মধ্যে সন্তান প্রসব করলে কমদিন ইদ্দত পালন করতে হয়। সুবাইআহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনাটি তেমন একটি ব্যতিক্রম ঘটনা।

আমাদের সমাজে দেখা যায় কমবয়সে মেয়েরা বিধবা হয়ে পড়লে তাদেরকে পুনরায় বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে সমাজ বাঁকা চোখে তাকায়। ফলে, তাদের সার্বিক চাহিদা (আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক) থাকা সত্ত্বেও বাকি জীবন তাদেরকে একা একা কাটাতে হয়। এটা একটি সামাজিক যুলুম।

কোনো মেয়ে ২০-২৫ বছরে বিধবা হলে দেখা যেতো যে, বিধবা হবার বছরখানেকের মধ্যে তাঁকে কারো প্রথম স্ত্রী বা দ্বিতীয় স্ত্রী হবার জন্য প্রস্তাব দেয়া হতো।
কিন্তু, পূর্বের স্বামীর প্রতি ভালোবাসার আনুগত্য প্রমাণে তাকে ২-৩ বছর বা সারাজীবন বিধবা হয়ে কাটাতে হয়। বছরখানেকের মধ্যে বিয়ে করলে সমাজের লোকজন তার সমালোচনা করবে। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিধবা নারীর ইদ্দত পালনের পর বিলম্ব না করে বিয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যান সুবাইআহ বিনতে হারিস আসলামিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা।

[মুসলিম ইতিহাসের মহীয়সী নারীদের জীবনের গল্প নিয়ে লেখা ‘পুণ্যবতী-২’ থেকে]

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture