Shaikh Salahuddin MakkiScholar Bangla

সকাল-সন্ধ্যায় এক মিনিটের আমল

সকাল-সন্ধ্যায় এক মিনিটের আমল
শাইখ সালাহউদ্দীন মাক্কী

আজকে আমরা ছোট্ট একটি আমলের কথা, ফযিলত পূর্ণ একটি আমলের কথা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।

আমাদের সমাজের অসংখ্য দ্বীনি ভাই ও বোনেরা দিনে রাতে নানান আমল কিন্তু করেন তবে আফসুস হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, সে আমল গুলু সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত না হওয়ায়। হয়ত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে সে গুলু গ্রহন যোগ্য হবে না।

আমাদের সমাজে অনেক কিতাবাদি লেখা হয়েছে মকছুদুল মুমিনীন, আমলে নাজাত, নেয়ামুল কোরআন, পাঞ্জেগানা অজিফা অনেক মানুষের হাতে হাতে এই বই গুলু আছে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে, ঐ সকল কিতাবে যে সমস্ত ফযিলত পূর্ণ আমল গুলুর কথা উল্লেখ আছে এই গুলা হয়ত অনেক বেশী দুর্বল, একান্তই দুর্বল। আর এমন অনেক আমল আছে, যে একবারেই মাউদুদ বা জাল , বানোয়াট। রাসূল কারীমে (সা.) এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু এই গুলির কিন্তু উল্লেখ যোগ্য কোন সোর্স নাই। মানুষ আন্তরিকতার সাথে আমল করছে, কিন্তু আফসোস হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে এই গুলা বিদআতে রূপ নিয়েছে।

আজকে আমরা যেই ছোট্ট আমলটির কথা বলব, এটি একবারে সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। সহিহ বুখারীতে এটার বর্ণনা আছে আরও অসংখ্য হাদিসের কিতাবে এই কথাটির বর্ণনা ফযিলত এর কথা এসেছে।

সম্মানিত দ্বিনি ভাইও বোনেরা,
আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) এর থেকে শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ
ক্ষমা লাভের সর্ব শ্রেষ্ট দোয়া, এটিকে বলা হয় সাইয়েদুল ইস্তেগফার।


আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সবচেয়ে চমৎকার মাধ্যম হচ্ছে এই দোয়াটি পাঠ করা।

হাদিসের শেষের দিকে এসে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের বেলা এই দোয়া বা ইস্তিগফার পড়বে সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে, যে হে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাকে অবশ্যই অবশ্যই আমি যা চাচ্ছি তা তিনি দিবেন এবং যা বললাম তা আমি সুদৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। এ রকম চিন্তা করে, আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) বলছেন যে, যে ব্যক্তি দিনের বেলা এটা বলবে এবং সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) বলছেন ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি রাতের কোন অংশে এই দু‘আটি বলবে এবং সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে অন্তরিক ভাবে এবং দৃঢ় চিত্তে তাহলে কি হবে।

ফজর হওয়ার আগেই বা সকাল হওয়ার আগেই সে মারা গেল, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সুবহানাল্লাহু তাআলা।

সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।

শ্রেষ্ঠতম ইস্তিগফার আল্লাহর বাণীঃ

وَقَوْلِهِ تَعَالَى : (اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا)، (وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُون

‘‘আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদ্বীনালা প্রবাহিত করবেন।।’’
(সূরা নূহ ৭১/১০-১২)

‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে…..।’’
(সূরা আলে ‘ইমরান ৩/১৩৫)

৬৩০৬. শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া-
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’

যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। [৬৩২৩]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)

Source
Hadithbd.com
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture