রোগীর সেবা করাও ইবাদাত

ভার্সিটির হল লাইফে এমন অহরহ উদাহরণ দেখেছি। গণরুমের কোনো বন্ধু অসুস্থ থাকলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো, শিডিউল অনুসারে তাকে দেখতে যাওয়া হতো। এক মাস আগে কেউ কাউকে চিনতোই না, সেখানে এক মাসের মাথায় একজন বন্ধু অসুস্থ হবার পর সবার পেরেশানি দেখার মতো ছিলো। মনে হতো, ঐ অসুস্থ বন্ধুটির জায়গায় যদি আমি হতাম!

আমাদের পরিবারে, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়। তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, সেবা-শুশ্রূষা করতে হয়, ওষুধ কিনে আনতে হয়, নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। আমাদের প্রত্যেকেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে।

পারিবারিক দায়, সামাজিক দায়, আত্মীয়তার সম্পর্কের দায় থেকে সাধারণত আমরা এই কাজগুলো করে থাকি। এগুলো আমাদের করতেই হতো। আমাদের ঘরে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী/স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হলে তো আমাদেরকেই সেবাযত্ন করতে হবে।

আমরা অনেকেই জানি না যে, স্বাভাবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা যে কাজগুলো করছি, সেগুলোও ইবাদাত হতে পারে। সেগুলোর জন্যও আমরা সওয়াব পেতে পারি। নিজের মায়ের সেবা করে সওয়াব, পাশের বাড়ির চাচীর ওষুধ কিনে দেবার সওয়াব, অসুস্থ নানার জন্য হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটানোর মধ্যেও সওয়াব আছে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন মুমিনের উপর আরেকজন মুমিনের ৬ টি অধিকারের কথা বলেছেন। তারমধ্যে প্রথম অধিকারটি হলো:
“যখন (কোনো মুমিন) অসুস্থ হবে, তার সেবা-শুশ্রূষা করবে।”
[সুনানে আন-নাসাঈ: ১৯৩৮]

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে আলেমগণ বলেছেন, অসুস্থকে দেখতে যাওয়াটা একজন মুসলিমের উপর সুন্নাতে মুয়াক্কায়দা। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) অসুস্থের সেবা করাকে ‘ফরজে কিফায়া’ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ, সমাজের কেউ অসুস্থ হলে অন্তত একজন হলেও তাকে সেবা করতে হবে।
রোগীর সেবা করলে কি সওয়াব হয়?

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে ব্যক্তি কোনো রোগীর সেবা করে, সে (ঐ মুহূর্তে) জান্নাতের ফল-ফলাদি সংগ্রহ করতে থাকে।”
[সহীহ মুসলিম: ৬৪৪৮]

আপনি যতোক্ষণ রোগীর সেবা করছেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের ফল ভোগ করাবেন।
আমরা অনেকসময় কোনো অসুস্থ প্রতিবেশী বা আত্মীয়কে দেখতে যাই। কাছের বা দূরের অসুস্থ কাউকে যখন দেখতে যাচ্ছি, তখন একদল ফেরেশতা আমাদের জন্য দু’আ করছেন! আমরা দেখতে যাচ্ছি অসুস্থকে, কিন্তু ফেরেশতারা খুশি হয়ে আমাদের জন্যই দু’আ করতে থাকেন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“কোনো মুসলিম অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালবেলা দেখতে গেলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০,০০০ ফেরেশতা তার জন্য দু’আ করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায়, তবে ৭০,০০০ ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়।”
[জামে আত-তিরমিজি: ৯৬৯]

রোগীকে দেখতে যাওয়া, রোগীর সেবা করাকে আমরা যেনো তুচ্ছ করে না দেখি। এটাও এক ধরণের ইবাদাত। এরজন্যও আমরা সওয়াব পাবো, ইন শা আল্লাহ।

ইসলামের সৌন্দর্য

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version