মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানকে ভয় দেখানো বৈধ নয়

মেয়েরা সাধারণত তেলাপোকা, মাকড়শা, টিকটিকি, বিছা দেখলে ভয় পায়। কেউ যদি জানে যে, অমুক মেয়ে এটা দেখলে ভয় পায়, তাহলে তার সাথে মজা করার জন্য বারবার তাকে সেটা দেখানো হয়। কেউ যদি তেলাপোকা ভয় পায়, একটি তেলাপোকা ধরে তার উপর ছুঁড়ে দেওয়া হয়। সে ভয় পেয়ে যখন চিৎকার দিতে থাকে, বাকিরা মজা পেয়ে হাততালি দেয়।

Prank সংস্কৃতি তো এখন এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, কাউকে ভয় দেখিয়ে, বোকা বানিয়ে মানুষ সেটা প্রচার করে বেড়ায়। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে ভয় দেখানোর জন্য। যখন আরেকজন দরজার সামনে আসে, তখন ‘ভাআআআউ’ বলে উঠে। আকস্মিক এমন ভয় দেখানো কখনো কখনো মারাত্মক হয়ে উঠে। এমনও ঘটনা আছে যে, হঠাৎ ভয় পেয়ে মানুষ মারা গেছে!

মানুষ যখন ভয় পায়, তার হৃদপিণ্ডের গতি বাড়তে থাকে এবং ক্রমশ বেড়েই যায়।

কেউ হয়তো অন্ধকার ভয় পায় (Nyctohobia)। তো, তার বন্ধুরা মিলে তাকে একটি অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায়, মজা করে এখানে আটকে রাখে বা বেঁধে আসে। ‘Attack of the Graveyard Ghouls’ উপন্যাসটি যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারবেন। উপন্যাসের শুরুতেই কয়েকজন বন্ধু মজা করতে গিয়ে তাদের একজনকে কবরে রেখে আসে। সে অপেক্ষা করতে থাকে বন্ধুরা তাকে নিতে আসবে, কিন্তু বন্ধুরা তো আসে না!

যাকে ভয় দেখানো হয় অনেকসময় তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করা হয় না। ভয় দেখিয়ে তাকে কাবু করতে গেলে আর না হোক সে লজ্জা পাবে, তাকে নিয়ে সবাই মজা করে বলবে- ‘আরে, একটা তেলাপোকা ভয় পাও তুমি। কী ভীতু!’

কাউকে আচমকা ভয় দেখি হাসাহাসির মধ্যে কোনো কল্যাণ আছে? উল্টো সমস্যা তৈরি হবার সম্ভাবনা আছে।
সে ভয় পেয়ে সাময়িক সময়ের জন্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে।
সে অপমানবোধ করতে পারে।
ভয় দেখানোর জন্য সে ঝগড়া শুরু করতে পারে, এক পর্যায়ে মন কষাকষিও হতে পারে।
এক্ষেত্রে ইসলাম আমাদেরকে কী বলে?

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণ একবার একটি সফরে গেলেন। একজন সাহাবী ঘুমিয়ে ছিলেন। আরেকজন সাহাবী সেই ঘুমানো সাহাবীকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এটা করেন স্রেফ মজা করার জন্য। ঘুমানো সাহাবী ঘুম থেকে উঠলে কী ভাববেন?
হয়তো ভাবতে পারেন তাকে কেউ বন্ধী করেছে বা কিডন্যাপ করেছে।
ঘুমন্ত সাহাবীকে বেঁধে ফেলার ফলে তিনি আচমকা ভয় পেয়ে যান।

এই ঘটনাটি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কানে পৌঁছে। মনে হতে পারে, একজন আরেকজনের সাথে মজা করে তো এমনটা করতেই পারেন। একজনকে ভয় দেখিয়ে তো বাকিরা আনন্দ পেলো। ১০ জনকে আনন্দ দিতে গিয়ে না হয় একজন ভয় পেলেন।
কিন্তু, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ঘটনাটি শুনার পর কঠিন হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বললেন:

“কোনো মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানকে ভয় দেখানো বৈধ নয়।”
[সুনানে আবু দাউদ: ৫০০৪]

নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন হুঁশিয়ারির পর আমরা কেনো আরেকজন মুসলিমকে ভয় দেখাবো? হোক না সেটা তেলাপোকা বা মাকড়শা দিয়ে। সে ভয় পায়, আমার উচিত তাকে ভয় না দেখানো।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version