বাঁচার তাগিদ

আজকাল বাবার চেহারাটা দেখলে ভিষণ কষ্ট হয়।
কখনো কখনো বুক ফেটে কান্না আসে! যিনি এক সময় আমাদের জন্য হার ভাঙা পরিশ্রম করেছেন জীবনের অর্ধেক বয়স কাটিয়ে দিয়েছেন প্রবাসে তিনি এখন অল্পতে-ই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। একা একা চলতে পারেননা।হাতে পানির গ্লাসটুকু নিতে পর্যন্ত হিমসিম খেতে হয়।

করোনার মহামারীতে আমার চাকরিটা চলে যায়। মাকেও সেই করোনার মধ্যেই হারাতে হয়।তারপর থেকে পরিবারে টানা পোড়া লেগেই আছে।

বড় আপুর বিয়েটা হয়েও হলোনা। হবেই-বা কি করে?
দুইলক্ষ টাকা নগদ আর ঘর সাজানোর সব ফার্নিচার দেওয়ার মতো সমর্থ আমাদেরতো নেই।

যেখানে বাবার প্রতি মাসে সাত হাজার টাকার ঔষধ কেনার সামর্থ্য নেই সেখানে নগদ টাকা কিংবা ফার্নিচার পাবো কোথায়??

গত মাসে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম দুইদিন আগে কল আসলো দেখা করার জন্য আজ।সকাল সকাল বের হলাম ভাবলাম বেশ খানিকটা আগেই উপস্থিত থাকবো নয়তো গত বারের মত খারাপ কিছু ঘটতে পারে। গতবার বৃষ্টি আর জ্যামের জন্য সময় মত উপস্থিত না হওয়ায় তারা আমাকে বরখাস্ত করেছিলেন অথচ পরে শুনেছিলাম আমার সাথে নাকি কোন এক স্যারের মামাতো ভাইয়ের ছেলে ছিল আমার জায়গায় তাকে বসানোর জন্য এমন বায়না ধরেছিলেন উনারা!

আমার নাম ডাকলেন,আল্লাহর নাম নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।কিছু প্রশ্ন করলেন আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুই ঠিকঠাক তবে স্যারের আবদার হচ্ছে হালকা নাস্তা পানির জন্য দশলহ্ম টাকা লাগবে।

কিছুটা সময় চুপ থেকে বের হয়ে গেলাম।

খোলা আকাশের নিচে বসে ভাবছি এক ভিন্ন রকম পৃথিবীতে কেউবা তার স্বপ্নের বাস্তবতা প্রমাণ করার জন্য অন্য কাউকে ঝাপটি মেরে ধরছে,আর কেউবা শুধু বাঁচার তাগিদে ছুটছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে!!

Exit mobile version