বদনযর লাগার পূর্বেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم “اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ ” .
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (বদনযর থেকে) আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার।
(ইবনু মাজাহ ৩৫০৮)
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহিঃ) বলেছেন,
وهي سهام تخرج من نفس الحاسد والعائن نحو المحسود والمعين تصيبه ، تارة وتخطئه تارة ، فإن صادفته مكشوفاً لا وقاية عليه ، أثرت فيه ، وإن صادفته حذراً شاكي السلاح ، لم تؤثر فيه،
বদনযর মূলত তীরের মতই, যা হিংসাকারী ও বদনযর প্রয়োগকারীর নফস ও মেজাজ থেকে বের হয়ে মাহসুদ ও বদনযরে আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে যায়। তীরের মতই এটি আঘাত হানে। কখনও লক্ষ্যবস্ত্ততে গিয়ে লাগে আবার কখনও ভুল করে। লক্ষ্যবস্ত্তটি যখন খোলা থাকে অর্থাৎ শরীরকে বন্ধ করে রাখেনা, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তার শরীরে বদনযর পতিত হয়। আর যেই মুসলিম বান্দা সুচতুর হয় ও সাবধানতা অবলম্বন করে এবং শরীরকে অস্ত্র দিয়ে ঢেকে রাখে, তার শরীরে বদনযর প্রয়োগকারীর তীর প্রবেশের রাস্তা খুঁজে পায়না বলে তার উপর বদনযর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। (মুখতাসারু যাদুল মাআদ ১৯০ পৃষ্ঠা)
Table of Contents
বদনযর থেকে বেচে থাকার উপায় সমূহ
প্রথম পদ্ধতি
আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত সমূহ প্রকাশ না করে গোপন রাখা:
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: اﺳﺘﻌﻴﻨﻮا ﻋﻠﻰ ﺇﻧﺠﺎﺡ اﻟﺤﻮاﺋﺞ ﺑﺎﻟﻜﺘﻤﺎﻥ، ﻓﺈﻥ ﻛﻞ ﺫﻱ ﻧﻌﻤﺔ ﻣﺤﺴﻮﺩ
মুয়ায ইবনু জাবাল (রা:) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো; কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে।” (মু’জামুল আওসাত তাবারানি ২৪৫৫)
দ্বিতীয় পদ্ধতি
অপরের নিয়ামত দেখে “বারকাল্লাহ” (بارك الله) “মাশাল্লাহ” (ما شاء الله) “লা হাউলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” ( لا حول ولا قوة إلا بالله) বলা।
“বারকাল্লাহ” (بارك الله)
ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ” ﺇﺫا ﺭﺃﻯ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺃﺧﻴﻪ، ﺃﻭ ﻣﻦ ﻧﻔﺴﻪ، ﺃﻭ ﻣﻦ ﻣﺎﻟﻪ ﻣﺎ ﻳﻌﺠﺒﻪ، ﻓﻠﻴﺒﺮﻛﻪ ﻓﺈﻥ اﻟﻌﻴﻦ ﺣﻖ
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন নিজের মধ্যে অথবা তার সম্পদের মধ্যে অথবা তার ভাইয়ের মধ্যে আশ্চর্য কিছু দেখতে পায়, তখন সে যেন তার জন্য বরকতের দু’আ করে, কেননা নজর লাগা একটি বাস্তব সত্য।
(মুসনাদে আহমাদ ১৫৭০০)
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ أَلَّا بَرَّكْتَ إِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ تَوَضَّأْ لَهُ فَتَوَضَّأَ لَهُ عَامِرٌ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, কোন মুসলমান নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে। অতঃপর আমিরকে বলিলেন, তুমি ‘বারাকাল্লাহ’ (بارك الله)বলিলে না কেন? বদ নজর (কুদৃষ্টি) সত্য। সহলের জন্য ওযু কর। আমির সহলের জন্য ওযু করিলেন।
(মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৭৪৫)
“মাশাল্লাহ ” (ما شاء الله) “লা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”
(لا قوة إلا بالله)
وَ لَوۡ لَاۤ اِذۡ دَخَلۡتَ جَنَّتَکَ قُلۡتَ مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ ۚ اِنۡ تَرَنِ اَنَا اَقَلَّ مِنۡکَ مَالًا وَّ وَلَدًا
(১)তুমি যখন ধনে ও সন্তানে আমাকে তোমা অপেক্ষা কম দেখলে তখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করে তুমি কেন বললেনাঃ
مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ
“আল্লাহ যা চেয়েছেন তা’ই হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই”।
(সুরা কাহাফ ৩৯)
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ، ﻋﻦ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: “ﻣﻦ ﺭﺃﻯ ﺷﻴﺌﺎ ﻳﻌﺠﺒﻪ، ﻓﻘﺎﻝ: ﻣﺎ ﺷﺎء اﻟﻠﻪ ﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻟﻢ ﻳﻀﺮﻩ “
(২)আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে, مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه
(আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো (বদনজর ইত্যাদি) বস্তু সেটার ক্ষতি করতে পারবে না।”
(শুয়াবুল ইমান বায়হাকী ৪০৬০)
عن أنس بن مالك ، رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ” من رأى شيئا فأعجبه، فقال: ما شاء الله، لا قوة إلا بالله، لم يضره العين “. يعني: لا يصيبه العين
(৩)আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে, مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه
(আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো বদনযর তার ক্ষতি করতে পারবে না অর্থাৎ তার উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা”। (ইবনুস সুন্নী ২০৭)
ﺛﻨﺎ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﺮﻭﺓ , ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ , ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺇﺫا ﺭﺃﻯ ﻣﻦ ﻣﺎﻟﻪ ﺷﻴﺌﺎ ﻳﻌﺠﺒﻪ , ﺃﻭ ﺩﺧﻞ ﺣﺎﺋﻄﺎ ﻣﻦ ﺣﻴﻄﺎﻧﻪ , ﻗﺎﻝ: ﻣﺎ ﺷﺎء اﻟﻠﻪ ﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ
(৪)হিশাম ইবনু ওরওয়া (রহিঃ) বর্ণনা করেন যে, তার পিতা যখন তার কোন ঘরে প্রবেশ করতেন কিংবা মুগ্ধকর কোন জিনিষ দেখতেন,
তখন ﻣﺎ ﺷﺎء اﻟﻠﻪ، ﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ
‘মাশা-আল্লাহ্ লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠ করতেন’।
(আল আসমা ওয়াস সিফাত বায়হাকী ৩৭১)
তৃতীয় পদ্ধতি
সকাল সন্ধ্যায় মাসনুন দোয়া যিকির করা:
قال: هذه الآية التي في سورة البقرة: {الله لا إله إلا هو الحي القيوم} (البقرة: ٢٥٥) من قالها حين يمسي أجير منا حتى يصبح، ومن قالها حين يصبح أجير منا حتى يمسي،
(১)”যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে”।
(আল মু’জামুল কাবীর তাবারানি ৫৪১, হাকেম ২০৬৪)
উল্লেখ্য যে নযর জিন ও মানুষের উভয়ের ই লাগতে পারে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنَ الْجَانِّ وَعَيْنِ الإِنْسَانِ
আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন এবং মানুষের বদনযর হতে আশ্রয় চাইতেন।
(তিরমিযি ২০৫৮)
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.
(২)আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারী ৫০০৯)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنَ الْجَانِّ وَعَيْنِ الإِنْسَانِ حَتَّى نَزَلَتِ الْمُعَوِّذَتَانِ فَلَمَّا نَزَلَتَا أَخَذَ بِهِمَا وَتَرَكَ مَا سِوَاهُمَا
(৩)আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিন এবং মানুষের কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন।
(তিরমিযি ২০৫৮)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ وَيَقُوْلُ إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
(৪)ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর জন্য দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন।
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক বদনযরের অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি”।
(বুখারী ৩৩৭১)
أَبَانَ بْنَ عُثْمَانَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُثْمَانَ يَعْنِي ابْنَ عَفَّانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ، حَتَّى يُصْبِحَ، وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُمْسِيَ،
(৫)আবান ইবনু উসমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ
যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবেঃ
‘‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’’
সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। অর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।
(আবু দাউদ ৫০৮৮)