Writing

পারিবারিক সমালোচনা

যদি আপনি সিদ্ধান্ত নেন বিসিএস ক্যাডার হবেন, এজন্য আপনি প্রস্তুতি নিবেন। আপনার পুরো পরিবার আপনার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। আপনার সময় অপচয় না হওয়ার জন্য আপনার খাবার আপনার টেবিলে চলে আসবে সময় মতো। কিছুক্ষণ পর পর স্বল্প খাবার পৌঁছে যাবে আপনার টেবিলে। আপনার আশেপাশে কেউ ভিড় ভিড় করবে না ডিস্টার্ব হবে ভেবে। সবাই কত খুশিতে থাকবে বংশের একজন বিসিএস ক্যাডার হবে। ক্লাসে যাওয়ার আগে আপনার জন্য নাস্তা টেবিলে রাখা থাকবে। ক্লাস করে এসে আপনি যেন শান্তিতে ঘুমোতে পারেন, সেজন্য বাচ্চাদেরকে আগেই ঘুম পাড়িয়ে রাখা হবে।

মেহমানরা বেড়াতে এসে যেন আপনার পড়াশুনায় ক্ষতি না করে, সেজন্য চৌদ্দগুষ্টিতে সাবধান নোটিস চলে যাবে। কেউ যদি এসেও পড়ে, আপনি দেখা করতে না আসলে কোনো সমস্যা নেই, কারণ আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় বাড়িতে কারফিউ পড়ে যাবে। কেউ জোরে টিভি ছাড়বে না, ফোনে গল্প করবে না। কিছুক্ষণ পরপর চা, নাস্তা আসতে থাকবে। আপনাকে যথাসাধ্য সবরকম শান্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। একসময় আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন। আপনার স্বামী-স্ত্রী-বাবা-মা গর্ব করে সবার কাছে আপনার অর্জনের কথা বলবে।

এবার ধরুন আপনি একই ব্যাক্তি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, কাজের পাশাপাশি একটা ইসলামিক ডিগ্রির জন্য পড়াশুনা করবেন, বা এলাকার মুসলিম ভাইবোনদের সাথে নিয়মিত ইসলামি আলোচনায় অংশ নেবেন, বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দেবেন। আপনার পরিবারের সদস্যরা এই কথা শোনার পর আপনার উপর শুরু হবে তাদের যাবতীয় দাবি এবং অভিযোগের বৃষ্টি। এমনিতেই কাজের বাইরে আপনাকে কম পাওয়া যায়, এখন কেন আরও কম পাওয়া যাবে?

যেই কাজ করতে আপনি বাধ্য নন, কেন আপনি সেই কাজের পিছনে এত সময় দেবেন? এগুলো না করে শুধু নামাজ-রোজা করলে ক্ষতি কী হবে? আমরা কী মুসলিম না?
এগুলো না করলে কি জান্নাতে যাওয়া যায় না?

এবার আপনার জীবন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, এমন প্রতিকূলতার মধ্যে সবাইকে ম্যানেজ করে, হাজারো কটু কথা শুনেও হয়তো সপ্তাহে দু’দিন করে ইসলামিক পড়াশোনা করবেন। ইসলামিক কোন কাজে দুই-একবার বা ইসলামিক কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু আপনার এই সিদ্ধান্তের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে না।

এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য কেও টিভি বন্ধ করে রাখবে না, বাচ্চাকাচ্চাদের আগে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে না। এমনকি নাস্তাও হয়তো আপনার বানিয়ে খাওয়া লাগবে। আপনার পরিক্ষা চলুক বা কোন জরুরি প্রোগ্রাম থাকুক না কেন, বাসায় কোনো মুরব্বি আত্মীয় আসলে, শ্বশুর-শাশুড়ি আসলে, বাচ্চাদের পরীক্ষা চললে কেউ আপনাকে একটুও ছাড় দেবে না। আপনাকে তখন সব বাদ দিয়ে সামাজিকতা করতে হবে।

আপনার এই ইসলামিক প্রচেষ্টা আশপাশের সবার চুলকানি বেড়ে যাবে। আপনার প্রতি সবার মাথা গরম থাকবে। আত্মীয়স্বজন আপনাকে ফোন করে আবার ‘সাধারণ মুসলিম’ হয়ে যাওয়ার জন্য বারবার বোঝাবে। তারা নিজেদের দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলবে, ইসলাম কি শুধু তোমার জন্য এসেছে?
আমাদের জন্য আসেনি?
আমরা কি মুসলিম না?
আমরা কি নামাজ রোজা করছি না?

এইসব হাজারো ঝড়-ঝাপটা, প্রতিকূলতার মধ্যেও দাঁতে দাঁত চেপে ধৈর্য ধরে প্রতিদিন হাসিমুখে চেষ্টা করে যাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। এত যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য প্রশস্ত অন্তর দরকার। অন্তরের প্রশস্ততা না থাকলে, অল্পতেই মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখায়। মানুষের সাথে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। দিনের পর দিন এত অন্যায়, অবিচার সহ্য করতে না পেরে বুক ভেঙ্গে যায়। তারপর ইসলামের পথ থেকে ঝরে যায়।
এই ঝরে যাওয়া ব্যাক্তিগুলার মধ্যে ইসলামের জ্ঞানের শূন্যতা রয়ে যায়। যার কারণে ইসলামের নানান বিষয়ের প্রতি সংকোচের সৃষ্টি হয়।

“সুদ আর ব্যবসায় লাভ তো একই কথা। কেন ইসলামে সুদ হারাম?
দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে কেন?
তিন ওয়াক্ত হলে কী সমস্যা হতো?
মাত্র আড়াই ভাগ সম্পদ যাকাত দিয়ে কার কী লাভ হবে?

কেন ছেলেদেরকে মেয়েদের দ্বিগুণ সম্পত্তি দেওয়া হয়?
এটা কি অন্যায় নয়?
কেন মেয়েদেরকে হিজাবের মতো একটা কঠিন কাজ করতে দেওয়া হলো?
ছেলেদের কেন হিজাবের কষ্ট করতে হয় না?
মেয়েদেরকে কেন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কষ্ট করতে হবে?
ছেলেরা বাচ্চা জন্ম দেয় না কেন?”

এরকম আরো হাজারো প্রশ্ন তার মনের মধ্যে রয়ে যায়। ইসলাম তার কাছে একটা তিতা ওষুধ হয়ে যায়। চোখ-মুখ কুঁচকে সে কোনোভাবে ইসলাম মেনে চলে। কিন্তু সেই মানায় কোনো শান্তি, তৃপ্তি, কৃতজ্ঞতা থাকে না।

আর যদি ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকে, তাহলে সে হয়ে যাবে একজন আদর্শ চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী। একটা সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে সে দিন কাটাবে। তখন আল্লাহর নির্দেশ মানতে আর কোনো সমস্যা থাকে না। মানুষ বুঝে যায় যে, সে ছয়শ কোটি মানুষের মধ্যে এক মামুলি মানুষ মাত্র। তার পক্ষে পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতিসহ পুরো মানবজাতির জন্য কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, তা বোঝা সম্ভব হয়। তার অহংকার বিলীন হয়ে যায়।

ইসলাম মেনে তখন সে শান্তি এবং তৃপ্তি খুঁজে পায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাকে ইসলাম বোঝার সামর্থ্য দিয়েছেন, এজন্য সে কৃতজ্ঞতায় বিনত হয়। তখন তার প্রতিটি সিজদা হয়ে যায় কৃতজ্ঞতায় ভরা, বিনম্র, শ্রদ্ধার সিজদা।

“যার অন্তরকে আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন ইসলামের প্রতি এবং যে তার রবের পক্ষ থেকে আসা এক আলোর মধ্যে রয়েছে, সে কি আর তার মতো হবে, যে কিনা এগুলো পায়নি?”
[আয-যুমার ২২]

লিখেছেন

হে আল্লাহ সেই সম্মানোত্তরে অন্তর্ভুক্ত করে দাও যে সম্মান তুমি দিয়েছ তোমার প্রিয় মুমিনদের

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture