Writing

চুল পড়া রোধ/চেহারা ফর্সা করার দোয়া কি সহিহ

চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার দুআ ‘মুসাল্লামাতুল লা-শিয়াতা ফি-হা’-এটা কি সহিহ?
চুল পড়া রোধ করার দোয়া কি?

নির্দিষ্টভাবে চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার জন্য বিশেষ কোনও দুআ, আমল কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয় নি। চুল পড়া রোধে ফেসবুকে একটি আমল চোখে পড়ছে। তা হল,
হাতের তালুতে তেল নিয়ে ‘মুসাল্লামা তুল্লা শিয়াতা ফী-হা’ এই দুআটা পড়ে তিনবার ফুঁ দিবেন। তারপর তেল গুলো মাথায় মালিশ করবেন।”

মূলত: এটি কুরআনের আয়াতকে অ জায়গায় ব্যবহারের শামিল। কুরআন-হাদিসে কোথাও কুরআনের এই আয়াতাংশটিকে চুল পড়া রোধ বা ফর্সা হওয়ার দুআ তো দূরের কথা সাধারণ রুকিয়ার দুআ হিসেবেও উল্লেখ করা হয় নি।
প্রকৃতপক্ষে উপরোক্ত বাক্যাংশটি কুরআনের আয়াতের একটি অংশ যা কোনও দুআ নয়। বরং এখানে বনি ইসরাইলের গাভীর বিবরণ বলা হয়েছে- যার সাথে চুল পড়া বা গায়ের রং ফর্সা করার কোনও সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,


قَالَ إِنَّهُۥ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٞ لَّا ذَلُولٞ تُثِيرُ ٱلۡأَرۡضَ وَلَا تَسۡقِي ٱلۡحَرۡثَ مُسَلَّمَةٞ لَّا شِيَةَ فِيهَاۚ قَالُواْ ٱلۡـَٰٔنَ جِئۡتَ بِٱلۡحَقِّۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُواْ يَفۡعَلُونَ
“(তিনি-মুসা আ.) বললেন, ‘তিনি বলেছেন, সেটা এমন এক গাভী যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বলল, ‘এখন তুমি সত্য নিয়ে এসেছ’। অবশেষে তারা সেটাকে জবেহ করলো, যদিও তারা তা করতে প্রস্তুত ছিল না।”
[সূরা বাকারা: ৭১]

মুহাক্কিক আলিমদের বক্তব্য হল, কুরআনের নির্দিষ্ট কোনও আয়াতকে ইচ্ছেমত বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পাঠ করা বৈধ নয় হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে। সুন্নত মনে করে এমনটি করা হলে তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। তবে কুরআন পাঠ করে তার ওসিলায় আল্লাহর কাছে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরে দুআ করা হাদিস সম্মত।

من قرأ القرآن فليسأل الله به. رواه الترمذي، وصححه الألباني.قال رسول الله صلى الله عليه و سلم
قال المباركفوري في تحفة الأحوذي: فليسأل الله به ـ أي فليطلب من الله تعالى بالقرآن ما شاء من أمور الدنيا والآخرة ـ أو المراد أنه إذا مر بآية رحمة فليسألها من الله تعالى، وإما أن يدعو الله عقيب القراءة بالأدعية المأثورة.اهـ
সুতরাং মাথার চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার উদ্দেশ্যে কুরআনের উপরোক্ত আয়াতের অংশটি পড়ে রুকিয়া করা শরিয়ত সম্মত নয়। বরং চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার জন্য জমজম পানি পান করার পাশাপাশি তা দ্বারা গোসল করা ও মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনুরূপভাবে হাদিস সম্মত রুকিয়া সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসের দুআ পড়ে রুকিয়াও করা শরিয়ত সম্মত। তৎসঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে সমস্যা চিহ্নিত পূর্বক তার তার পরামর্শ মোতাবেক বিশেষ কোনও ক্রিম, তৈল বা ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অথবা এ সব বিষয়ে ঘরোয়া নানা পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। মানুষের অভিজ্ঞতা ও ইতিবাচক ফলাফল জেনে সঠিক পদ্ধতিতে সেগুলোও কাজে লাগাতে পারেন। যেমন:
মাথার চুল পড়া রোধে নিম্নোক্ত পদ্ধতিটি ভালো কার্যকর বলে জানা যায়:
ভিটামিন ই(Vitamin E) সমৃদ্ধ যে কোন তেল
যেমন: নারকেল, অ্যালমন্ড, সরিষার তেল ইত্যাদি-হালকা গরম করে মাথায় মাসাজ করলে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই মাসাজের পূর্ণ উপকার পেতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তেল দিয়ে মাথা মাসাজ করে শুয়ে পড়ুন।

সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

আল্লাহু আলাম

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button