Writing

গান-বাজনা অন্তরের মৃত্যু ঘটায়

গান-বাজনা অন্তরের মৃত্যু ঘটায় ও মুনাফিকী উদগত করে

গান-বাজনা শোনা হারাম। আর তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে লেশমাত্র সন্দেহ নেই। সালফে সালেহীন; সাহাবা ও তাবেঈন কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে; গান অন্তরে মুনাফিকী (কপটতা) উদগত করে। উপরন্ত গান শোনা; অসার বাক্য শোনা এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর্যায়ভুক্ত।আর ইচ্ছাকৃত অশ্লীল-অসার বাক্য বা কথা কানের মধ্যে পেশ করা বা পৌছান কানের যেনার শামিল ।
আর মহান আল্লাহ বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
(সূরা লুকমান ৩১/৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন; الْغِنَاءُ وَأَشْبَاهُهُ গান-বাজনা ও অনুরূপ বস্তুসমূহ। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৭৯১, ১২৭৭, সহিহ)

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে এই আয়াতে ভাবার্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তিনবার কসম করে বলেন; এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গান-বাজনা ও রাগ-রাগিনী।
(তাফসীর ইবনে কাসীর ১৫ খন্ড, ৬৬৪ পৃষ্ঠা)

সাহাবাগণের (তাফসীর) ব্যাখ্যা এক প্রকার দলীল। তাফসীরের তৃতীয় পর্যায়ে এর মান রয়েছে। যেহেতু তাফসীরের তিনটি পর্যায়; কুরআনের তাফসীর কুরআন দ্বারা, কুরআনের তাফসীর সুন্নাহ দ্বারা এবং কুরআনের তাফসীর সাহাবাগণের উক্তি দ্বারা। পক্ষান্তরে গান-বাজনা শ্রবণ করার অর্থই হল, সেই কর্মে আপতিত হওয়া; যা থেকে নবী (ﷺ) সাবধান করেছেন।

আবূ মালেক আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

‘আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৭৬)
সহীহুল বুখারী: ৫৫৯০

لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
অবশ্যই আমার উম্মতের কতক সম্প্রদায় ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।
(সহীহুল বুখারী: ৫৫৯০)

অর্থাৎ তারা নারী-পুরুষের অবৈধ যৌন সম্পর্ক, মদপান এবং রেশমের কাপড় পরাকে হালাল ও বৈধ মনে করবে অথচ তারা পুরুষ, তাঁদের জন্য রেশম বস্ত্র পরিধান বৈধ নয়। অনুরূপ মিউজিক বা বাজনা শোনাকেও বৈধ ভাববে। আর বাদ্য-যন্ত্র; যার শব্দে মন উদাস হয়, এমন অসার যন্ত্রকে বলে। 

মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهٰـى عَنِ النُّوْحِ وَ التَّصَاوِيْرِ وَ جُلُوْدِ السِّبَاعِ وَ التَّبَرُّجِ وَ الْغِنَاءِ وَ الذَّهَبِ وَ الْـخُزِّ وَ الَـحَرِيْرِ
নবী (ﷺ) মাতম করা, মূর্তি বা ছবি, হিংস্র জন্তুর চামড়া, নগ্নতা ও পর্দাহীনতা, গান, (পুরুষের জন্য) সোনা ও রেশমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
(আহমাদ: ১৬৯৩৫; সহীহুল জামে: ৬৯১৪)

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى أُمَّتِي الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْمِزْرَ وَالْكُوبَةَ وَالْقِنِّينَ
অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন।
(আহমাদ ৬৫৪৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৭০৮)

গান-বাজনা অন্তরের মৃত্যু ঘটায় - Islami Lecture
গান-বাজনা অন্তরের মৃত্যু ঘটায় – Islami Lecture

ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন;
الدُّفُّ حَرَامٌ وَالْمَعَازِفُ حَرَامٌ وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ
ঢোল হারাম, বাদ্যযন্ত্র হারাম, তবলা হারাম এবং বাঁশীও হারাম।
(বাইহাকী ২০৭৮৯)

আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেন,
الْجَرَسُ مَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ
ঘন্টা বা ঘুঙুর হল শয়তানের বাঁশি।
(আবূ দাঊদ ২৫৫৬)

উম্মে হাবীবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেন;
لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رُفْقَةً فِيهَا جَرَسٌ
ফিরিশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় ঘন্টার শব্দ থাকে। 
(আহমাদ ২৬৭৭১, সহীহুল জামে’ ৭৩৪২)

আনাস বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেন,
صَوْتَانِ مَلْعُونَانِ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ : مِزْمَارٌ عِنْدَ نِعْمَةٍ وَرَنَّةٌ عِنْدَ مُصِيبَةٍ
দুনিয়া ও পরকালে দুটি শব্দ-ধ্বনি অভিশপ্ত; সুখ ও খুশীর সময় বাঁশীর শব্দ এবং মসীবত, শোক ও কষ্টের সময় হা-হুতাশ ধ্বনি।
(সহীহুল জামে ৩৮০১; সিলসিলাহ সহীহাহ; ৪২৭)

ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেন;
ثَمَنُ الْخَمْرِ حَرَامٌ وَمَهْرُ الْبَغِيِّ حَرَامٌ وَثَمَنُ الْكَلْبِ حَرَامٌ وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ
মদের মূল্য হারাম, ব্যভিচারের উপার্জন হারাম, কুকুরের মূল্য হারাম, তবলা হারাম।
(ত্বাবারানী ১২৪৩৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৮০৬)

ইমরান ইবন হুসায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄُﻣَّﺔِ ﺧَﺴْﻒٌ ﻭَﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﻗَﺬْﻑٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺘَﻰ ﺫَﺍﻙَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﺫَﺍ ﻇَﻬَﺮَﺕِ ﺍﻟْﻘَﻴْﻨَﺎﺕُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ ﻭَﺷُﺮِﺑَﺖِ ﺍﻟْﺨُﻤُﻮﺭُ
এই উম্মাতের মধ্যে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং উপর থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কখন এরূপ হবে? তিনি বললেন, যখন ব্যাপকহারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে।
(তিরমিজী: ২২১২, হাসান)

আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত; রসূল (ﷺ) বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ فِـيْ هذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذلِكَ إِذَا شَرِبُوا الْـخُمُوْرَ وَاتَّـخَذُوا الْقَيْنَاتِ وَضَرَبُوا بِالْمَعَازِفِ
অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে। (সহীহুল জামে: ৫৪৬৭)

আবূ মালেক আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন,
لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا وَيُضْرَبُ عَلَى رُؤُوسِهِمْ بِالمَعَازِفِ وَالْقَيْنَاتِ يَخْسِفُ الله بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ
অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন! 
(ইবনে মাজাহ ৪০২০; সহীহুল জামে: ৫৪৫৪)

সুতরাং সকল মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দের প্রতি গান-বাদ্য শ্রবণ করা থেকে সাবধান হওয়ার জন্য এই উপদেশ বানী প্রেরণ করছি। তারা যেন এমন আলেমদের কথায় ধোঁকা না খায়, যারা বাদ্য যন্ত্রকে বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। যেহেতু এর অবৈধতার সপক্ষে সমস্ত দলীল ব্যক্ত ও সুস্পষ্ট।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture