Writing

কোনো মুসলিম কি ইয়াযিদকে ভালোবাসতে পারে?

ইয়াযিদকে অনেকেই ‘সাধু’ বানাতে চান। এটা এই যুগে না, সালাফদের যুগেও ছিলো। তাদের এই অপচেষ্টার ব্যাপারে কথা বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)।
তিনি বলেন:

“কিছু লোক ভাবে ইয়াযিদ ভালো লোক ছিলো, ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলো, রাসূলের যুগে জন্ম নেয়া সাহাবী ছিলো; এগুলো পথভ্রষ্টতা।”
[ইমাম ইবনে তাইমিয়া, মাজমু আল-ফাতাওয়া ৪/৪৮২]

অন্যদিকে, সহীহ বুখারীর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীও (রাহিমাহুল্লাহ) ইয়াযিদের ব্যাপারে যারা গুণকীর্তন করে, তাদেরকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন:
“ইয়াযিদের প্রতি মহব্বত রাখা ও তার গুণকীর্তন করা কেবল বেদআতি ও বাতিল আকীদাধারীর পক্ষেই সম্ভব। কারণ, ইয়াযিদের ভেতর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিলো, যেজন্য কেউ তাকে ভালোবাসলে তার ঈমান চলে যাবার আশঙ্কা থেকে যায়। কেননা, শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও শুধু তাঁর জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।”
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল ইমতা বিল আরবাঈন আল মুতাবাইনাতুস সামা, পৃষ্ঠা ৯৬]

কন্সট্যান্টিনোপল অভিযানের ফযিলত সংক্রান্ত হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে কেউ কেউ ইয়াযিদকে ‘নাজাতপ্রাপ্ত’ বলে দাবি করেন। সেটার প্রেক্ষিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
“রাসূলুল্লাহর (সা:) ‘মাগফুরুল লাহুম (তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত) হাদীস দিয়ে কিছু লোক ইয়াজিদের নাজাতের স্বপক্ষে দলিল দেয়। কারণ, ইতিহাসের গ্রন্থাদি সাক্ষ্য দেয় যে, সে ঐ দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং সে তাদের সেনাপতি ছিলো। আসলে এই হাদীস দ্বারা যুদ্ধের আগের করা তার অপরাধ ছাড়া অন্য কিছু মাফ হওয়া সাব্যস্ত হয় না। কারণ, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কাফফার অন্তর্ভুক্ত। আর কাফফারার রীতি হলো পূর্বের গুনাহ দূর করা, ভবিষ্যতের গুনাহ না। হ্যাঁ, যদি হাদীসে এরকম হতো যে ‘সে কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমাপ্রাপ্ত’ তাহলে তার নাজাত বুঝা যেতো। তা তো কস্মিনকালেও বলা হয়নি।

তাই, এই যুদ্ধের (কন্সট্যান্টিনোপল) পর হুসাইন (রা:) –কে হত্যা, মদীনাকে ধ্বংস করা, মদ্যপানের সাথে লেগে থাকা ইত্যাদি জঘন্য যেসব কাজ ইয়াযিদ করেছে, সেসব আল্লাহর কাছে ন্যস্ত থাকবে। অন্যান্য পাপীদের ব্যাপারে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন অথবা শাস্তি দিতে পারেন। এরপরও পবিত্র আহলে বাইয়াতের অবমাননাকারী, হারামে সীমালঙ্গনকারী, সুন্নাতের পরিবর্তনকারী সম্পর্কিত বর্ণিত হাদীস উপরোক্ত আম বক্তব্যকে খাস করার জন্য তো রয়েছেই।”
[শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, শারহু তারাজিমি আবওয়াবিল বুখারী, পৃষ্ঠা ৩১-৩২]

তৎকালীন সময়েও কেউ কেউ ইয়াযিদকে ‘আমিরুল মু’মিনীন’ বলতো। ইসলামের পঞ্চম খলিফা হিশেবে খ্যাত উমর ইবনে আব্দুল আযিয (রাহিমাহুল্লাহ) যখন শুনলেন এক লোক ইয়াযিদকে ‘আমিরুল মু’মিনীন’ বা বিশ্বাসীদের নেতা বলে অভিহিত করছে, তখন তিনি সে ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন।
[ইবনে হাজার হায়তামী, আস সাওয়াইকুল মুহরিকা, পৃষ্ঠা ২২১]

কারো ব্যাপারে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন খুবই সতর্ক।
সেই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে ইয়াযিদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি একটি রেটোরিকাল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন:
“কোনো মুসলিম কি ইয়াযিদকে ভালোবাসতে পারে?”

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture