Writing

আল্লাহ আমাদের এতো ভালোবাসেন কিভাবে বুঝাবো

যখন সূরা হিজর এর ৪৯ নম্বর আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ওয়াল্লাহি, আমি থমকে দাঁড়িয়েছিলাম কয়েক মুহূর্ত। আমার রব আমাকে এতো ভালোবাসেন? আমি কীভাবে সেই ফিলিংসটা আপনাদের বুঝাবো? এই যে এখন লিখছি, আমার বুক ধর ধর করে কাপছে। একটু আয়াতটি পড়েই দেখুননা, “আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ” [সূরা হিজর:৪৯]

না এভাবে আসল ফিলিংস আসবে না। হৃদয়ের গভীর থেকে আবেগ নিয়ে মূল আরবীটা পড়েন তাহলেই বুঝবেন,

نَبِّئْ عِبَادِیْۤ اَنِّیْۤ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُۙ
‘(হে নবী) আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ‘

আল্লাহ এখানে কোন বান্দার কথা বলছেন? আপনার/আমার কথাইতো নাকি? যেই আমি প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছি তার নাফরমানি করে সেই আমাকেই তিনি বলছেন, ‘হে আমার বান্দা! আমিতো ক্ষমাশীল’। কেমন বান্দা আমি তার? যেই আমি তার ভয়ে কখনো চোখের পানি ফেলিনি, যেই আমি তাকে কখনো প্রাণ ভরে ডাকিনি, যেই আমি দিনে মাত্র পাঁচবার তার সামনে দাড়াতেও অবহেলা করি, যেই আমি তার নিষেধ করা জিনিষের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাই, তিনি পছন্দ করেননা জেনেও যেই আমি হারাম কাজগুলো করে যাই, ঘন্টার পর ঘন্টা মুভি,গান আর অশ্লীল আলাপে লিপ্ত থাকি যেই আমি, দীনের আলোচনা শুনতে অনীহা প্রকাশ করি যেই আমি সেই আমাকেই কিনা তিনি বলছেন, ‘হে আমার বান্দা! এরপরেও তোমার হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখনো আমার ক্ষমার দরজা তোমার জন্য খুলা আছে। হে আমার বান্দা! আমিতো ক্ষমাশীল ও করুণাময়’।

ভাবতে অবাক লাগেনা? আমিতো দ্বিতীয়বার ভাবতেই পারছিনা। কি দয়া তার! এতো ভালো আমাকে বাসেন তিনি? এই গোনাহগার, নাফরমান বান্দার জন্যেও তার ভালোবাসার কমতি নেই। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে থাকিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘আল্লাহ তুমি এতো ভালো কেন?’। আল্লাহর অসীম দয়ার দিকে থাকিয়ে আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারিনা। এই তুচ্ছ বান্দার জন্যে তার কত ভালোবাসা!

তার ভালোবাসার একটা নমুনা দেখেন। এক ব্যক্তি ১০০টা খুন করেছে। সে দীনের পথে ফিরে আসতে চায়। এক আলিমের কাছে গেলো। আলিম বললেন তুমি অমুক গ্রামে চলে যাও তাহলে দীনি পরিবেশ পাবে। সে রওয়ানা দিলো, কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হলো। আযাবের ফেরেশতারা বললো এ আমাদের, রহমতের ফেরেশতারা বললো না এ আমাদের। পরে তারা বিচার করতে বসলো। যদি সে ঐ গ্রামের নিকটবর্তী হয় তাহলে সে রহমতের ফেরেশতাদের হবে আর নাহলে আযাবের ফেরেশতাদের। এবার দেখেন আল্লাহ কি করেন। ১০০ খুন করেছে যে বান্দা সেই বান্দার জন্যে তার ভালোবাসাটা একটু দেখেন। তিনি ঐ গ্রামের দিকের মাটিকে নির্দেশ দিলেন তুমি আমার বান্দার নিকটবর্তী হয়ে যাও। মাটি নিকটবর্তী হয়ে গেলো এবং রহমতের ফেরেশতারা তার রুহ নিয়ে চলে গেলো। আল্লাহু আকবার!

এরপরেও যদি আপনি ক্ষমা পাওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হোন তাহলে আপনাকে আমি সেই কথাই শুনাবো যা ইবরাহীম (আলাইহিসালাম) ফেরেশতাদের সাথে কথোপকথনের সময় বলেছিলেন,

‘(ইবরাহীম) বললো, পথভ্রষ্ট লোকেরাই তো তাদের রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়।’ [সূরা হিজর:৫৬]

আর এসব কিছু জানার পরও যদি আপনি মুখ ফিরিয়ে নেন তবে এর পরের আয়াত মানে সূরা হিজর এর ৫০ নং আয়াত কেবলমাত্র আপনার জন্য। কষ্ট করে পড়ে নিবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture