Writing

অমুসলিমদের উৎসবে যেতে বন্ধুর আপত্তি

মাহিন! চল না বন্ধু, আজকে একটু দূর্গাপূজা থেকে ঘুরে-টুরে আসি।
এসবে যেতে নেই, বন্ধু
কেনো বন্ধু? একদিনই তো যাবো। প্রতিদিন তো আর যাচ্ছি না।
বুঝলাম তো, কিন্তু এই একদিনের জন্যও যেতে নেই। এমনকি এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে যাওয়াতে আমাদের ইসলামে কঠিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ধর্মের এই জিনিসটিই আমার কাছে ভালো লাগে না। শুধু শুধু নিষেধাজ্ঞা আর নিষেধাজ্ঞা। ধুর ত্যাড়ি! এসব ভাল্লাগে না। এখানে গিয়ে তো আর আমি তাদের কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছি না। কেবল একটু ঘুরেটুরে ইনজয় করে আসতে চাচ্ছিলাম। আর তাতেই কিনা বলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাহলে অনুমতিটা রয়েছেটা কোথায়-একটু শুনি?

দেখ বন্ধু, তুই কিন্তু বিরক্তির সাথে কথাগুলো বললি। মুসলিম হিসেবে ওভাবে কথা বলা কোনোক্রমেই মানায় না। এরকম আচরণ মুসলমানিত্বের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ফলে কথাগুলো এতোটা বিরক্তি নিয়ে তোর বলা উচিত হয়নি। মূলত, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামকে ওভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও বিরক্তি ভাব নিয়ে কথা বলে।
বিরক্তি প্রকাশ করবো না তো কী?কোথাও যেতে চাইলেই তো ধর্মের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে।

কে বলেছে, কোথাও যেতে চাইলেই ধর্মের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে? এটা তোর একদম মনগড়া কথা। যেখানে যে বিধিনিষেধের প্রয়োজন রয়েছে কেবল সেখানেই ধর্ম তা দিয়ে রেখেছে। আর তা কেবলই মানুষের কল্যাণের জন্য। কেউ ইচ্ছে করলে মানুক, ইচ্ছে না করলে না মানুক। ক্ষতি তো তার নিজেরই হবে, ধর্মের তো আর কিছু আসে যায় না। বাই দ্যা ওয়ে, গতকালের সমাবেশে কি তুই গিয়েছিলে?
গতোকাল তো আমাদের কোনো সমাবেশ ছিল না। ওটা তো বি এন পির সমাবেশ ছিল।

সো হোয়াট? জনতার অংশ হিসেবে কি তোর সেখানে যাওয়া উচিত ছিল না?
আশ্চর্য, সেখানে আমি কেনো যাবো?আমি তো অন্য দলের কর্মী। বি এন পি তো আমার দল নয়।
তুই কেনো যাবে-মানে? আরে ব্যাটা, তুই অন্য দলের কর্মী হয়েছিস তো কী হয়েছে, উদারতা বলতেও তো একটা কথা আছে। তাই না?
এভাবে তামাশা না করলেও পারতি, বন্ধু।

কেনো, কেনো?এখানে আবার তামাশার কী হলো?
ফাহিম, তুই ভালো করেই জানিস যে, আমি আওয়ামীলিগের একজন সক্রিয় কর্মী। তারপরও তুই কিভাবে আমাদের বিপক্ষ দলের সমাবেশে উপস্থিত হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন দাঁড় করাতে পারলি?এটা কি কোনো কথা হলো?মেজাজটাই খারাপ করে দিলি কিন্তু।

আর উদারতা দেখানোর জন্য তাদের কার্যক্রমে যোগ দিতে হবে-এটা কেমন কথা? আমরা তাদের সমাবেশে কোনো বাঁধা দিচ্ছি না, তাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি। আর এটাই তো হচ্ছে তাদের প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড়ো উদারতা।
তাই বলে উদারতার নামে আমরা তাদের কার্যক্রমে যোগ দিতে পারি না। এটা কি কোনো কথা হতে পারে না কি?

তাছাড়া, আমি আমার বিপক্ষে দলের সমাবেশে কোন দুঃখে যোগ দিতে যাবো? তখন কি আর আমার দল আমাকে দলে রাখবে? সবচেয়ে বড়ো কথা, একদলের সাথে যুক্ত থেকে অন্য দলের সভা সমাবেশে যুক্ত হওয়া নিজ দলের সাথে প্রতারণার শামিল, নিজ দলের কমিটমেন্ট লঙ্ঘন করার শামিল। এমনকি এতে নিজের দলের সাথে মুনাফেকি করা হয়ে যাবে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক এবং বিবেকবান মানুষ কি তার নিজ দল ব্যতিরেকে অন্য দলের কার্যক্রমে যোগ দিতে পারে?তোর মতো মানুষের মস্তিষ্কে কীভাবে যে এ জাতীয় আজব প্রশ্ন আসে তা আমার বুঝে আসে না।

আরে বাহ! তুই তো দেখছি খুব দারুণ কথা বলতে পারিস। বক্তৃতার মঞ্চে ভালোই কাজে দিবে। তোদের আগামী সমাবেশে তোর বক্তৃতা শোনার জন্য আমি মুখিয়ে থাকবো কিন্তু।
যাইহোক, এবার মন দিয়ে আমার কথাগুলো শুন।

তোর ভাষ্যমতে, নিজ দল ব্যতীত অন্য দলের সভা সমাবেশের সাথে যোগ দেওয়াতে যদি নিজ দলের সাথে প্রতারণা করা হয়ে যায়, দলের কমিটমেন্ট ভঙ্গ হয়ে যায়, সর্বোপরি মুনাফেকী হয়ে যায় তবে নিজ ধর্ম ব্যতিরেকে অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে যোগ দিলে নিজ ধর্মের সাথে প্রতারণার শামিল হবে না কেনো?তাতে নিজ ধর্মের কমিটমেন্ট লঙ্ঘিত হবে না কোনো? সর্বোপরি মুনাফেকি হবে না কেনো?এছাড়া, অন্য দলের সমাবেশে কোন দুঃখে যোগ দিতে যাবে-সেটা যদি বুঝতে পারিস তবে অন্য ধর্মের উৎসবে কোন দুঃখে যোগ দিতে যাবে-সেটা কেনো বুঝতে পারিস না?

আরে, ধর্ম কি এতোই টুনকো বিষয় নাকি যে, দলের কোনো বিষয় আসলে মানবে আর ধর্মের বিষয় আসলে মানবে না। কোনো দল নয়, এই ধর্মই মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে আসে। এই ধর্মই তো শেখায় এই মুহুর্তে মারা গেলে আমি চির জীবনের জন্য কোথায় যাবো, আমাকে সেখানে কী নিয়ে যেতে হবে, ভালো মন্দের ওপর নির্ভর করে সেখানে আমার অবস্থান কেমন হবে। এসব কি কোনো দল শিখায়?

তোর মতো দলকানারা দলের ক্ষেত্রে সবই বুঝিস, সবই মেনে চলিস। আর ধর্মের ক্ষেত্রে ঐ একই বিষয় আসলে নাক সিটকানো শুরু করে দিস, এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিস। বুঝলি বন্ধু, আর একেই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড তথা দ্বিমুখীতা। এগুলো অনেক বড়ো মুনাফেকি। তোর জানা আছে তো, মুনাফিকের স্থান জাহান্নামেও হবে না? মুনাফিকের স্থান হবে জাহান্নামেরও একদম নিচে অর্থাৎ সর্বনিম্ন স্তরে। বুঝতেই তো পারছিস, যেখানে জাহান্নামই মহাভয়ঙ্কর সেখানে তার নিম্নস্তর না জানি কতোটা ভয়ঙ্কর হবে।

সেজন্যই তো বলি বন্ধু হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলের টপিকে নিয়ে গেলো কেনো।
তোদের এই একটাই সমস্যা। কোনো কিছুতে ধরা খেয়ে গেলে কিংবা সেই বিষয়ে পেরে না উঠলে টপিককে ভিন্ন মুড়ে নিয়ে যেতে চাস। কিন্তু তবুও স্বীকার করতে চাস না। এগুলো কিন্তু অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ অহংকারকারীকে মোটেও পছন্দ করেন না।

আরে নাহ, বন্ধু! আমি কিন্তু তোর পুরো বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছি। বিষয়টির সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। তোর যৌক্তিক আলোচনা শুনেই আমার দূর্গাপূজায় যাওয়ার শখ মিটে গেছে।
তাই নাকি?তাহলে তো ভালোই। আচ্ছা, এবার বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করানোর জন্য তোকে আরেকটি বিষয় বলি। মনে কর, তোর বাবাকে কেউ কোনো এক জায়গায় খুব অপমান করছে। এখন তোর বাবাকে যে জায়গায় অপমান করা হচ্ছে সেই জায়গায় অবস্থান করে তা দেখে যাওয়া কি তোর কাছে খুব আরামদায়ক মনে হবে?নিজেকে কি তখন তোর কন্ট্রোলে রাখতে পারার কথা?
প্রশ্নেই আসে না, তা আবার কী করে সম্ভব? আরে, এসব শুনেই তো আমার গা গরম হয়ে যাচ্ছে।

তাহলে যে জায়গায় আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শিরক করা হয় যা চরম অপমানেরই নামান্তর সেই জায়গায় যাওয়ার কল্পনা পর্যন্ত কিভাবে আমরা করতে পারি?এসব জায়গায় যাওয়ার চিন্তা করতেও কি আমাদের একটুও বুঁক কাঁপার কথা নয়?

যে আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, কেবল সৃষ্টি করেই তো থেমে থাকেন নি। আমাদের জন্য প্রতিনিয়ত আলো-বাতাস, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, রিজিকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন ইত্যাদি আমাদের জন্য যাবতীয় সবকিছু করে যাচ্ছেন সেই আল্লাহর নাফরমানী হয় এমন জায়গায় কিভাবে আমরা জেনেশুনেও যেতে পারি? কিভাবে আমরা আল্লাহর অপমান নিজ চোখে একদম অনায়াসে দেখে যেতে পারি, তাদের সাথে আনন্দে মেতে উঠতে পারি?তখন কি আমাদের খারাপ লাগার কথা নয়?তখন কি আমাদের গা গরম হয়ে যাওয়ার কথা নয়?

অবশ্যই, তখন তো আরো বেশি গা গরম হয়ে যাওয়ার কথা। আসলে, তুই এখন যেভাবে বলছিস বিষয়টি নিয়ে আমার আগে কখনো ওভাবে চিন্তা করা হয়নি। ফলে তাদের উৎসবে যোগ দেওয়া কতোটা জঘন্য তা কখনো আমার উপলব্ধিতেও আসে নি।

যাইহোক, এখন উপলব্ধি করতে পারছিস তাতেই শুকরিয়া। আশা করি, এমন উপলব্ধি ভবিষ্যতে তোকে কোনো অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার চিন্তা করা থেকেও বিরত রাখবে। ইন শা আল্লাহ!

দেখ, এটা ঠিক যে, অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় অধিকার অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। আমরা তাদেরকে কোনো বাঁধা দেবো না। এটাই আমাদের ইসলামের শিক্ষা। এমন আচরণই তাদের প্রতি সবচেয়ে বড়ো উদারতা। কিন্তু তাই বলে উদারতার নামে আমরা মুসলিমরা কোনোক্রমেই তাদের উৎসবে যোগ দিতে পারি না ঠিক যেমন উদারতার নামে এক রাজনৈতিক দল অন্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে যোগ দেয় না। তখন এটা উদারতা হবে না, হবে ধর্মের প্রতি চরম উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ।

অধিকন্তু, বাবাকে অপমান করা হয় এমন জায়গায় অবস্থান করা যেমন কোনো সন্তানের জন্য স্বস্তিদায়ক হয় না ঠিক তেমনি আল্লাহর সাথে শিরক করা হয় এমন জায়গায়ও কোনো মুসলিমেরও অবস্থান করা স্বস্তিদায়ক হওয়ার কথা নয় যদি তার মধ্যে ঈমানের সামান্যতমও ছিটেফোঁটা থেকে থাকে।
আবার নিজ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ভঙ্গ করলে যেমন নিজ দলের সাথে বেঈমানী তথা মুনাফেকি করা হয়ে যায় ঠিক তেমনি ধর্মের কমিটমেন্ট ভঙ্গের কারণেও ধর্মের সাথে মুনাফেকি করা হয়ে যায়, কুফরী হয়ে যায় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তুই কি জানিস, আল্লাহর সাথে শিরকের ভয়াবহতা কেমন? যদিও শিরকের আলোচনা ব্যাপক তবুও আমি সচেতনতার স্বার্থে তোকে কোরআনের দু-একটি আয়াতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি নিষ্ঠাবান হও, তার সাথে কাউকে শরীক করো না;আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’য়ালার সাথে অন্য কাউকে শরীক করলো,
তার অবস্থা হচ্ছে, সে যেনো আসমান থেকে ছিটকে পড়লো অতঃপর (মাঝপথেই) কোনো পাখী যেনো তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো, কিংবা (আসমান থেকে যমীনে পড়ার আগেই) বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরে কোনো (অজ্ঞাতনামা) স্থানে ফেলে দিলো।
[সূরা আল হাজ্জ,আয়াত নং : ৩১]

চিন্তা করেছিস, কতো ভয়াবহ এক উপমা? নিজেকে কখনো আকাশ থেকে পড়ে যাওয়ার কথা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারিস?
আল্লাহ আরো বলেছেন যে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’য়ালার সাথে (কাউকে) শরীক করলো, সে (মূলত) চরমভাবে গোমরাহ হয়ে গেলো। “
[সূরা আন নেসা,আয়াত নং : ১১৬]

আল্লাহ তা’য়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, তার ইচ্ছে অনুযায়ী তার বান্দার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন কেবল শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। আর আল্লাহর এমন বাণীই কি শিরকের চূড়ান্ত পর্যায়ের ভয়াবহতা বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়?
অবশ্যই! আসলে, এসব বিষয়ও আমার অজানা ছিল। এখন জানাতে খুব উপকৃত হলাম। আর বললাম তো, তোর কথাগুলো শুনে ইতোমধ্যে শুধু দূর্গাপূজাই নয় বরং অমুসলিমদের যে কোনো শিরকী উৎসবে যাওয়ার শখ আমার মিটে গেছে।

মা শা আল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! এই তো বন্ধু আমার বুঝতে পেরেছে। কিছু মুসলিম ভাইবোনদের জন্য আফসোস হয় যারা উদারতার নাম নিয়ে নিজে ধর্মের বিধি-নিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনায়েসে অন্য ধর্মের উৎসবে যোগ দেয়। অনেকক্ষেত্রে তাদেরকে বুঝালেও তারা বুঝতে চায় না। উল্টো আরও নানান যুক্তি দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। অথচ শিরক যে কতো বড়ো অন্যায়, কতো ভয়াঙ্কর একটি পাপ এই ফিলিংসটাই যেনো তাদের মারা গেছে।

তারা বুঝতেই চায় না, মুশরিকদের উৎসবে যোগ দেওয়া মানে তাদের শিরকী উৎসবের প্রতি নিজের সন্তুষ্টি তথা সমর্থন প্রকাশ করা। আর তা কতোই-না মারাত্নক বিষয়। দোয়া করি আল্লাহ যেনো আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ তথা হেদায়েত দান করেন। আমিন!
আমিন!

লিখেছেন

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture