Writing

সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী

সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াত লাভের পর সর্বপ্রথম যিনি তাঁকে নবী বলে মেনে নেন, তিনি হলেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। হেরা গুহা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী লাভ করে সর্বপ্রথম স্ত্রীর কাছেই যান। স্ত্রী তাঁকে সান্ত্বনা দেন, স্বাভাবিকতা তুলে ধরেন এবং বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ ছিলেন খাদিজার (রা:) কাজিন ওয়ারাকা ইবনে নওফেল।
খাদিজার (রা:) নামের সাথে অনেকগুলো ‘প্রথম’ জড়িয়ে আছে।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। উম্মতের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম অজু-নামাজ পড়েন। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম স্ত্রী। সাহাবীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম জান্নাতের সুসংবাদ পান।
তিনি প্রথম সাহাবী, যাকে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ‘সালাম’ দেন।

ইসলাম-পূর্ব জাহেলী যুগেও তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। এজন্য তাঁকে ডাকা হতো ‘আত-তাহিরা’। তাঁর পূর্বের স্বামী/বাবার কাছ থেকে পাওয়া ব্যবসায়ের উত্তরাধিকারী তিনি হোন। সেই ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য তিনি ‘ম্যানেজার’ নিয়োগ দিতেন। কিন্তু, বেশিরভাগই ছিলো অসৎ। শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর ব্যবসার দায়িত্ব নেন, তখন অনেক মুনাফা হয়। তাঁর চারিত্রিক গুণে মুগ্ধ হয়ে তিনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।

বয়সের দিক থেকে খাদিজা (রা:) ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিনিয়র। বিয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় নি। ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে খাদিজার (রা:) বিয়ে হয়। বিয়ে পরবর্তী খাদিজা (রা:) তাঁর ব্যবসায়ের পুরো দায়িত্ব দেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে।

নবুওয়াত লাভের আগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেরা গুহায় যেতেন। দীর্ঘদিন সেখানে অবস্থান করতেন। কখনো তিনি নিজে বাড়িতে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতেন, কখনোবা খাদিজা (রা:) তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন।

একমাত্র ইব্রাহিম (রা:) ছাড়া রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতো সন্তান জন্মগ্রহণ করেন, সবাই ছিলেন খাদিজার (রা:) সন্তান
ইসলামের প্রচার করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে নানান প্রতিকূলতার শিকার হতেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতেন, মন খারাপও হতো মাঝেমধ্যে। তাঁর এমন সঙ্কটকালে তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন, উদ্বুদ্ধ করতেন খাদিজা (রা:)।

অন্যদিকে, খাদিজার (রা:) প্রতি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিখাদ ভালোবাসা ছিলো। তিনি বলতেন, “খাদিজার (রা:) প্রতি ভালোবাসা আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।” খাদিজার (রা:) প্রতি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন ভালোবাসা তাঁর ইন্তেকালের পরও থাকে। যার ফলে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য স্ত্রীদের কাছে সেটা ঈর্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এই ঈর্ষা ছিলো ‘গায়রত’ থেকে। খাদিজাকে (রা:) না দেখা সত্ত্বেও তাঁকে সবচেয়ে বেশি ঈর্ষা করতেন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)।

ইসলাম সম্পর্কে খাদিজার (রা:) আন্ডাস্টেন্ডিং ছিলো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। পরবর্তী সময়ের পরিভাষা অনুযায়ী যাকে বলা হয় ‘আকীদা’। একবার জিবরাঈলের (আ:) মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে ‘সালাম’ প্রেরণ করেন। তিনি বলেননি, ‘আল্লাহর উপরও শান্তি বর্ষিত হোক’। এটা বলা হলে ভুল হতো। কারণ, আল্লাহর উপর কে শান্তি বর্ষণ করবেন?
সেই সালামের জবাবে তিনি বলেন-
‘আল্লাহ নিজেই শান্তিদাতা…’।

অন্যদিকে, এর প্রায় এক যুগ পর সাহাবীরা নামাজের তাশাহুদে বলে উঠেন ‘আল্লাহর উপর শান্তি বর্ষিত হোক’। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে সংশোধন করে দেন।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে খাদিজার (রা:) সংসার-জীবন ছিলো প্রায় ২৫ বছর। নবুওয়াতের দশম বছরে খাদিজা (রা:) যখন ইন্তেকাল করেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে তখন সাময়িক বিষাদ নেমে আসে। একই বছর ইন্তেকাল করেন তাঁর চাচা আবু তালিব। সীরাত লেখকদের কাছে এই বছরটি ‘দুঃখের বছর’ নামে পরিচিত।

সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture