জামাতে নামাজে আমাদের কিছু ভুল

জামাতে নামাজে আমাদের কিছু ভুল

আমরা জামাতে নামাজ পড়ি আর সাথে অনেক ভুল করি। জামাতে নামাজে যাই, যদি দেখি ইমাম সাহেব ক্বেরাত শুরু করেছেন তাহলে আমরা খুব দৌড়াতে শুরু করি। এরকম আছে না নাই?
আছে।
কিন্তু রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা যখন নামাজে যাও তখন যদি নামাজের ইকামাত হয়েও যায় তোমরা নামাজে যাবে হেঁটে হেঁটে, শান্তভাবে হাঁটবে। অন্তরে কোনো উৎকণ্ঠা রাখবে না।”

উৎকণ্ঠা কেন ভাই?
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি যখন ঘর থেকে বের হয়েছো নামাজের নিয়তে, তখনই তোমার আমনামায় নামাজের সওয়াব লেখা হয়ে গেছে’।
মসজিদে গিয়ে যদি দেখো নামাজ শেষ হয়ে গেছে তাহলেও তোমার আমলনামায় জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব লেখা হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই উৎকণ্ঠা কেন?

কাজেই আমাদের ভিতরে এত উৎকণ্ঠা কেন?
আমি শান্ত মনে মসজিদে যাবো। আমরা মসজিদে ঢুকে যদি দেখি ইমাম সাহেব রুকূতে চলে গেছেন, দৌড় দিয়ে গিয়ে নামাজে দাড়াই। এটা করলে গুনাহ হবে। শান্তভাবে কাতারে যাবো।

যদি আমরা দেখি ইমাম সাহেব রুকূ থেকে উঠে গেছেন, আমরা তখন দাড়িয়ে থাকি! নাহ এভাবে দাড়িয়ে থাকলে গুনাহ হবে।
আপনি দাড়াবেন না, ঠিক শান্তভাবেই যাবেন, যেয়ে কাতারে দাড়াবেন আল্লাহু আকবার বলে নামাজে দাড়াবেন, এরপরে ইমামের সাথে সিজদায় চলে যাবেন। রুকূ পেলে রাকাত পাওয়া হবে, ঐটা আর পড়া লাগবে না। আর সিজদাহ পেলে রাকাত পাওয়া হবে না কিন্তু সিজদাহর সওয়াব পাওয়া হবে। একটা সিজদাহর মূল্য কবরে গেলে বুঝবেন। মনে হবে একটা সিজদাহর সওয়াবের জন্য দুনিয়ার সব সম্পদ দিয় দিই!

কাজেই, কেন সিজদাহ মিস করবো?

কাজেই, কেন সিজদাহ মিস করবো?
ইমাম সিজদায় গেলে সিজদায় না গিয়ে দাড়িয়ে থাকলে গুনাহ হয়। কথা বুজেছেন? কাজেই, শান্ত মনে কাতারে যাবেন যদি দেখেন ইমাম রুকূ থেকে দাড়িয়ে গেছেন তাহলে ইমামের সাথে দাড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় চলে যাবেন। রাকাত পাবেন না কিন্তু সওয়াব পাবেন।
আমরা মসজিদে শুধু রাকাত পাওয়ার জন্য যাই?
না, সওয়াব পাওয়ার জন্য যাই?

আমরা কাতারে দাঁড়াই, বাঙালী তিনজনকে ধাক্কা দিলে মাঝখানে আরেকজন দাঁড়াতে পারে। এভাবে নামাজ মাকরুহ হয়!

সাহাবীরা কীভাবে জামাতে দাড়াতেন?

শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে, পায়ের সাথে পা লাগিয়ে, হাটুর সাথে হাটু লাগিয়ে কাতারে দাঁড়াতেন। কাজেই, আমরা কাতারে দাঁড়াবো অন্তত শরীরের সাথে শরীর লাগবে যেন আর একটা চুল পরিমান জায়গা না থাকে। কাতার শুরু হয় ইমামের পেছন থেকে। ইমামের ডানে যারা আছেন বাঁয়ে চেপে আসবেন আর বাঁয়ে যারা আছেন ডানে চেপে আসবেন।
যার কারণে কাতারে ফাঁক হবে তার নামাজ মাকরুহ হবে, গুনাহ হবে। প্রত্যকেই নিজেরটা ঠিক রাখবেন। পাশের জনের সাথে কাঁধ লাগিয়ে দিবেন, কাঁধে কাঁধ মিলে যাবে, হাতে হাত মিলে যাবে।

বাঙালী আবার শরীরের সাথে শরীর লাগালে বিরক্ত হয়! আল্লাহু আকবার। অথচ রাসু্লের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীরা শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে, হাটুর সাথে হাটু লাগিয়ে দিতেন।
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিখিয়েছেন, “কাতারের ফাঁক পূরণ করো”। কাতার বাঁকা হলে, ফাঁকা হলে নামাজ মাকরুহ হয়ে যাবে। গুনাহ হবে। কিন্তু মুসলমান, বাংলাদেশের মুসলমান বড় কষ্ট লাগে তারা শরীরের সাথে শরীর লাগালে রাগ করে! চোখ পাকিয়ে তাকায়!

ইসলাম আমাদেরকে এক হতে শিখিয়েছে। ফাঁক হয়ে দাঁড়ালে আল্লাহ অন্তরে ফাঁক করে দিবেন, দলাদলি করে দিবেন, অন্তরের মিল মহব্বত নষ্ট করে দিবেন।

কাতারে ফাঁক হলে শয়তান ঢুকবে, মনের ভেতর ওয়াসওয়াসা দিবে। আর কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবেন দেখবেন নামাজের মনোযোগ বেড়ে যাবে, শয়তান ঢুকতে পারবে না। এই জন্য কাতারে ঘন হয়ে দাড়াবেন, ফাঁক হয়ে দাড়াবেন না।

এখন অনেকে বলবে, এতকাল চললো এখন হুজুর এসে নতুন মাসয়ালা দেয়! ভাইয়েরা, অনেক জিনিসে ভুলভ্রান্তি থাকে। আগে বাংলাদেশের মানুষেরা স্বরস্বতী পূজা করতো, লক্ষী পূজা করতো।
হুজুররা পূজা ঠেকিয়ে নামাজ শিখিয়ে গেছেন। কাতার শিখানোর সময় পাননি। এখন আমরা কাতার শিখাবো, এখন তো আর আপনারা লক্ষী পূজা করেন না। কাজেই হুজুররা যতটুকু পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ আমাদেরকে ভালো জায়গায় রেখে গেছেন।

আগে আপনারা ট্রাক্টর চিনতেন না। ঠিক না?
এখন তো চিনেন। তো এখন কী বলবেন যে আগে যেহেতু ট্রাক্টর ছিলো না তাই আমরা এখন ট্রাক্টর চালাবো না?
আগে ইট ছিলো না, কারেন্ট ছিলো না, পাকা বাড়ি ছিলো না। এখন কেউ বলে নাকি যে আগে এসব ছিলো না তাই এখন আমার এসব লাগবে না?

আমাদের পীর-মাশায়েখ উলামায়ে কেরাম আমাদের সমাজের লোকেদের তখন যতটুকু পেরেছেন শিখিয়ে গেছেন। এখন আমরা অনেক ভালো পরিস্থিতি পেয়েছি আমরা বাকিটুকু করবো। কাজেই, খবরদার নবীর সুন্নত পেয়েও আগের অজুহাত দিবেন না। আগের হুজুররা যা করেছেন ঠিক আছে।
তারা কিছু করেছেন আর কিছু করার পরিবেশ পাননি। তারা অনেক অসুখ ঠিক করেছেন। রোগী একটা গেলো ডাক্তারের কাছে, তার অনেক রক্ত যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে। ডাক্তার রক্ত বন্ধ করলো কিন্তু মাথায় ব্যাথা ছিলো তা সারেনি। শুধু রক্ত পড়া বন্ধ করে দিছে। এখন আরেক ডাক্তার মাথা ব্যথার ঔষধ দিবে। কথা বুজতে পেরেছেন?
এজন্য কখনোই আগের কোনো হুজুরের অজুহাত দিয়ে সুন্নাতের বিরুদ্ধে যাবেননা।

শ্রুতিলেখক️
আল মুনিম

Exit mobile version