Writing

আপনার আমল যেদিন অন্যরা নিয়ে যাবে

একবার দুই ভাই-বোন মিলে হজ্জ্বে গেল। ভাইটি তার স্ত্রীকে রেখেই হজ্জ্বে গিয়েছিল, কারণ তাদের অনেকগুলো সন্তানের দেখভাল করতে হয় বলে স্ত্রী যেতে চাননি। বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য সে বাড়িতেই থেকে গেল। হজ্জ্বের সময় সেই ভাই-বোন কোথাও যাচ্ছিল। যেতে যেতে ভাই বোনকে বলল, “তুমি আগাতে থাক, আমি স্ত্রীর জন্য কিছু উপহার কিনে আসছি।” বোনটি একটু তাড়ার মধ্যে ছিল বলে সে বিরক্ত হয়ে ভাইয়ের স্ত্রী সম্পর্কে একটা সামান্য শব্দ উচ্চারণ করল।

অথচ ঐ বোন আর তার ভাইয়ের স্ত্রীর মধ্যে কোনোরকম শত্রুতা ছিল না যে তারা একে অপরকে কটাক্ষ করবে, তাদের মধ্যে বেশ ভালোই মিল ছিল। কিন্তু এটা ছিল মুহূর্তের জন্য মুখ ফসকে যাওয়া কিছু শব্দ।

এরপর ঐ ভাইয়ের স্ত্রী একটি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নটা অনেকটা এরকম যে, তার ননদ তাকে নিজের কৃত হজ্জ্বটি উপহার হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে। মহিলাটি এই স্বপ্ন দেখে তাজ্জব হয়ে গেল এবং একজন শাইখকে ফোন করে বলল, “শাইখ! আমি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। আমার ননদ আমাকে তার হজ্জ্ব দিয়ে দিচ্ছে।” শাইখ বললেন, “আপনার ননদ নিশ্চয়ই আপনার ব্যাপারে খারাপ কিছু বলেছে, গীবত করেছে, আর এ কারণে তার হজ্জ্ব আপনি পেয়ে গেছেন।”

যখন ভাই-বোন হজ্জ্ব করে ফেরত আসল, মহিলাটি তার ননদকে স্বপ্নের ব্যাপারে বলল। যেহেতু তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য ছিল না, বোনটি তার দোষ স্বীকার করল এবং অনুতপ্ত হয়ে মাফ চাইল। তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল, তারপরও একটা মাত্র শব্দের কারণে তার সম্পূর্ণ হজ্জ্ব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল!

তাহলে চিন্তা করে দেখুন, যারা নিয়মিত মানুষের সমালোচনা করেই যাচ্ছে, এই ব্যাপারে প্রবন্ধ লিখছে, প্রতিনিয়ত অন্যের সম্মানে আঘাত করছে—তারা প্রতিনিয়ত কী পরিমাণ নেক আমল নিজেদের আমলনামা থেকে হারাচ্ছে!

ওয়াল্লাহি! মুসলিমদের ব্যাপারে গীবত কোনো ফেলনা বিষয় নয়! আপনার বলা মাত্র কয়েকটি শব্দের জন্য বছরের পর বছর ধরে করা ভালো আমলগুলো আরেকজনকে দিয়ে দিতে হবে! মাত্র কয়েকটি শব্দ আর সেটির ক্ষতিপূরণ সারাজীবনের সব নেকী— কী ভয়ংকর ব্যাপার! আল্লাহ এমন পরিণতি থেকে আমাদের হেফাযত করুন।

এগুলো কোনো মনগড়া কথা নয়। ভেবে দেখুন এই গীবতের কারণে মুসলিমদের মধ্যে কী পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে—

তাহলে বুঝতে পারবেন কেন এর শাস্তি এত ভয়াবহ! একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন রাসূল (ﷺ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন তখন আইশা (রাঃ) বললেন, “উনি তো খাটো।”

আরেক বর্ণনায় আছে যে, তিনি মুখে সাফিয়্যা (রাঃ)-কে ঠিক খাটোও বলেননি, শুধুমাত্র হাত নাড়িয়ে বুঝিয়েছিলেন। অত:পর রাসূল (ﷺ) আইশা (রাঃ)-কে বললেন, “তুমি যদি এই কথাটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করো, তবে তা সমুদ্রকেও পরিবর্তন করে দেবে।”

চিন্তা করুন, শুধু একটা শব্দ কিংবা একটু ইশারা, অথচ তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ!

শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফিজাহুল্লাহ

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture